রাজশাহীর পুঠিয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অবহেলা ও গাফিলতিতে পুরো উপজেলায় ঝুলে আছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার ১০টি ওয়াশ ব্লকের কাজ। এতে করে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে ওই দশ স্কুলের শিক্ষার্থীরা। যেন দেখার কেউ নেই। কাজ যা করা হয়েছে, তা যেন আই ওয়াশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২০২২ সালে পুঠিয়া উপজেলার ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হাড়োগাথী, সাধনপুর, সাতঘোষপাড়া, জগদিশপুর, সাতবাড়িয়া, শুকদেবপুর, দিঘলকান্দি, বাশঁপুকুরিয়া, গন্ডগোহালী ও গাঁওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিটি প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ শুরু করেন মেসার্স গোলাম মোর্তুজা নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৭টি, সারা ইন্টার ন্যাশনাল ৩টি, মোট প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বেশি ব্যয়ে ১০টি ওয়াশ ব্লকের একটিওর কাজ শেষ হয়নি। যদিও এবছরেই কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে নির্মাণ কাজ শেষ না করে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। ঘটতেও পারে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ওই ওয়াশ ব্লক গুলোর যতটুকু কাজ করা হয়েছে, সেগুলোও খুবই নিম্নমানের। যা এখনই কোথাও কোথাও ভেঙে পড়েছে। আর কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তাও জানে না কেউ।
এধরনের কাজ করে এমন বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যেসময় ওই কাজের টেন্ডার করা হয়েছে, সেসময় ওই কাজ করলে এই ব্যয়েই সুন্দর ভাবে শেষ হতো। আর ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছোট বাচ্চাদের। কোনো কোনো স্কুলের বাচ্চারা ওয়াশ ব্লক না থাকায় স্কুলের সাথে অন্যের জমিতে ও বাড়ির পাশে খোলা স্হানে টয়লেট ও প্রস্রাব করছে। এতে চড়ম বিরক্ত হচ্ছেন স্কুলের পাশে বসবাসকারীরা।
এসব বিষয়ে শুকদেবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার মোহাম্মদ মোজাম্মেল ও হাড়োগাথী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম সিরাজী নামের দুই প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার স্কুলে যে টয়লেট আছে তা ব্যবহার করার মত নয়। তাই জরুরি ভিত্তিতে ওয়াশ ব্লক দরকার।
বাচ্চারা খোলা মাঠে, মানুষের বাড়ির পাশে ও অন্যের জমিতে গিয়ে টয়লেট ও প্রস্রাব করে। ওয়াশ ব্লক খুব বেশি দরকার। এবং কাজগুলা নিম্নমানের হওয়ার কারণে ওয়াল এবং পিলারের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে ওয়াশ ব্লকের সেপটিক ট্যাংক গুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন মুহূর্তে ছোট ছোট বাচ্চারা সেখানে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
স্হানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা ও লিটন নামের দুই ব্যক্তি বলেন, বহুদিন ধরে এসব অযত্ন অবহেলায় এভাবেই পড়ে আছে। কারও কোন উদ্যোগ নাই। এছাড়াও স্কুলের পাশে বাড়ি এমন এক ব্যক্তি বলেন আমাদের জমিতে এবং বাড়ির সাথে টয়লেট ও প্রস্রাব করে এতে খুব দূর্গন্ধ ছড়ায়। বিষয়টি দেখা খুবই জরুরী।
কেনো নির্মাণ কাজ ঝুলে আছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার মাসুদ রানা বলেন, কাজ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে হচ্ছে না। ভালো কাজ হচ্ছে। আর ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে।
অন্যদিকে ৪২ লাখ টাকার ৩টি ওয়াশ ব্লকের কাজ করা সারা ইন্টার ন্যাশনাল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে অজ্ঞাত কারনে ঠিকাদারের প্রতি অতিরিক্ত দরদ দেখিয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান তিনি বলেন, উপজেলায় মোট ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লকের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তাদের ওই টাকায় কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। আরো সময় ও ব্যয় বাড়াতে হবে। এটা লেসের কাজ। দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতির কারনে, ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। লেসের কাজ, কম টাকায় তারা কাজটি করে দিচ্ছে।