কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন প্রার্থী নির্বচনী প্রচারণার জন্য পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি এবং প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে নির্বাচনী অফিস করতে বা অস্থায়ী ক্যাম্প করতে পারবেন। এদিকে জেলা প্রশাসনের সেই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জ কুমারখালী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকের প্রচারণার জন্য ৩৭টি অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প করেছেন।
অথচ জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি প্রচারণার জন্য ৯টি নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প থাকার কথা। এই বিষয়ে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রউফ গত শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) কুমারখালীর রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে আবদুর রউফ জানান, আমি আব্দুর রউফ, স্বতন্ত্র প্রাথী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ৭৮ কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসন, প্রতীক ট্রাক।
আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধিতে প্রতিটি প্রার্থীর পৌর এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ০১ (এক) টি ও প্রতিটি ইউনিয়নে ০১ (এক) টি করে অফিস করার নির্দেশনা থাকিলেও অত্র আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত দলীয় প্রার্থী, নৌকা প্রতীক এর কুমারখালী পৌরসভায় ০৯ (নয়) টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ৩৭ (সাইত্রিশ) টি অফিস করিয়াছে। উক্ত অফিস হইতে বিভিন্ন সময় আমার সমর্থকদের বিভিন্ন প্রকার হুমকী, ভয়ভীতি প্রদর্শন করিতেছে। যাহা নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।
অতএব, প্রার্থনা উপরোক্ত আবেদনটি গ্রহণ পূর্বক নৌকা প্রতীকের অতিরিক্ত অবৈধ অফিস অপসারণের লক্ষে আপনার নিকট একটি লিখিত আবেদন করিলাম। সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুমারখালী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাজীপাড়া মোড়, দূর্গাপুর মশার বাড়ী এবং জসিমের বাড়ীতে নৌকা প্রতীকের ৩টি নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে।
পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের রেলপাড়া ও বাবু কমিশনারের বাড়ীর পাশে নৌকা প্রতীকের ২টি নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের আবেদ মোড়, সলেমান মোড়, মানিক মোড়, রান্টুর মোড়, শরিফের বাড়ীর মোড় এবং নবগ্রহ মন্দির মোড়ে নৌকা প্রতীকের ৬টি নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের মেইন অফিস, সেরকান্দি মাদ্রাসা, সর্দ্দারপাড়া মোড়, রেলপাড়া এবং হলবাজার এলাকায় নৌকা প্রতীকের ৫টি নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাস টার্মিনাল, রেলগেট এবং রেলগেট এলাকায় নৌকা প্রতীকের ৩টি নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের মোতাহার দোকান, ঝাউতলা, শলান মোড় এবং বাটিকামাড়া রেল গেট এলাকায় নৌকা প্রতীকের ৪টি নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের গড়াই ব্রীজের সাথে, জালাল মোড়, নুরুর দোকান, কহিনুরের মসজিদ মোড়, ঝাউতলা এবং খয়েরচারা এলাকায় নৌকা প্রতীকের ৭টি নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে।
এছাড়াও পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের শাহীন মোড়, আমতলা মসজিদের মোড়, খয়েরচারা এবং কাশেমের দোকনে নৌকা প্রতীকের ৫টি নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমারখালী উপজেলা প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার অনান্য উপজেলার মত শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং কোন প্রকার অনিয়ম দেখা মাত্রই দ্রুত পদক্ষেপ নিতেও দেখা গেছে তাদের। কিন্তু প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নৌকা প্রতীকের নেতা, কর্মি ও সমর্থকেরা তাদের ইচ্ছা মেতাবেক যত্রতত্র নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করে ঐ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করে আসছে।
ইতিমধ্যে কুমারখালী পৌরসভা সহ কুমারখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু স্থানে সেলিম আলতাফ জর্জের নৌকা এবং আবদুর রউফের ট্রাক মার্কা প্রতীকের কর্মি ও সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঐ সমস্ত হামলায় ইতিমধ্যে বেশ কুমারখালী থানা কয়েকটি মামলা সহ বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, যেহেতু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটির বেশী নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প করা যাবে না। সে নিয়ম প্রত্যেক প্রার্থী এবং তাদের নেতা কর্মিদের মেনে চলা উচিত। আর প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক নির্বাচনী অফিস বা অস্থায়ী ক্যাম্প করার কারনে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হাওয়ার সমূহ সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
এছাড়ও সব সময় পৌর এলাকায় সেলিম আলতাফ জর্জের নৌকা এবং আবদুর রউফের ট্রাক মার্কা প্রতীকের কর্মি সমর্থকদের মাঝে প্রায় সব সময় উত্তেজনা বিরাজ করে। আমরা চাই জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে প্রত্যেক প্রার্থী শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা করবেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রউফ বলেন, আমি আইনের প্রতি সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল। তাই বিষয়টি নিয়ে আমি কুমারখালীর রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। সেই অভিযোগের অনুলিপি আমি কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানকেও দিয়েছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তিন দিন অতিবাহিত হলেও এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রশাসনের এই ভূমিকায় আমি হতাশ। আশা করি প্রশাসন অতিদ্রুত এই বিষয়ে কার্যকারী ভূমিকা পালন করবে। এই বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ কমিটির চেয়ারম্যান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিরুল আরাফাতের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি আমরা দেখবো। এই বিষয়ে জানতে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাবুবুল হকের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।