আজ বুধবার (১০ জানুয়ারি), জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে জাতির অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লি হয়ে ঢাকা ফেরেন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাঁকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে। জাতির জনক পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে। পরে পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লি হয়ে ঢাকা আসেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে বাংলাদেশকে প্রায় শূন্য অবস্থা থেকে দেশ পুনর্গঠন শুরু করেছিলেন। যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের চারিদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ, রাষ্ট্রীয় কোষাগার শুন্য, রাস্তাঘাট কলকারখানা বিধ্বস্ত। এ অবস্থায় বাংলাদেশে রাষ্ট্রকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন করে।
এছাড়া দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধু সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গঠন, পরিত্যক্ত কারখানার সমূহ জাতীয়করণ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সহকারীকরনসহ একটি নতুন শিক্ষা কমিটি গঠন করে। তাছাড়া এ সরকার যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে রিলিফ, রেশনিং পদ্ধতি চালু করে এবং দেশে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন করে, যা দ্বিতীয় বিপ্লব নামে পরিচিতি পায়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার মাএ দশ মাসের মধ্যে জাতিকে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান জাতিকে উপহার দেন। শিক্ষা, শিল্প, খাদ্য, অর্থনীতি,প্রবৃত্তি ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ বন্ধুত্বের নীতিতে পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করে।এছাড়াও শোষনহীন সমাজ নির্ধারিত লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মজুতদার, কালোবাজারি প্রভৃতি অশুভ শক্তি কে শক্ত হাতে দমন করেন।
দেশের ভেতর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নানা ষড়যন্ত্র এবং বামপন্থীদের নানারকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু সফলভাবে বাংলাদেশের পুনর্গঠনের কাজটি করেছিলেন তাঁর সততা ও অসাধারণ দেশপ্রেমের কারণে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার না হলে বাংলাদেশে তাঁর হাত ধরেই বিশ্বের দরবারে অনেক আগেই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করতে পারত।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে অবদান ও আত্মত্যাগ রেখেছেন তা অবিস্মরণীয়।
ReplyForward
|