দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থীর বিজয় মিছিলে বোমা হামলায় আহত চা দোকানদার এমারত সরদার (৪৫) তিনদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা গেলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এই ঘটনায় ঐ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। উত্তেজনা থাকায় ঐ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
নিহত এমারত সরদার মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের ফরজউদ্দিন সরদারের ছেলে।
পুলিশ, পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপকে পরাজিত করে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকের মোসা. তাহমিনা বেগম। এই আনন্দে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনের পরের দিন গত সোমবার (৮ জানুয়ারী) সকালে একটি বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলটি কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কালিগঞ্জ থেকে ফাসিয়াতলা বাজারের যাবার পথে মিছিলে হঠাৎ করে হামলা চালায় নৌকার পরাজিতপ্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের কর্মী-সমর্থকরা। অভিযোগ উঠে আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান সাহিদ পারভেজের নেতৃত্বে বিজয় মিছিলে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় এমারত সরদারসহ দুইজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে এমারতের অবস্থা আরো গুরুতর হলে সেখান থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে আহত এমারত সরদারকে ঢাকার প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান এমারত সরদার।
এই ঘটনায় নিহত এমারত সরদারের ছেলে হাসান সরদার বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কালকিনি থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।
নিহতের স্ত্রী শাহানাজ বেগম বলেন, আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ছেলেদের এতিম করা হয়েছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
নিহতের ছেলে ওহিদ সরদার বলেন, ৮ জানুয়ারী বিজয় মিছিলে নৌকার সমর্থকরা বোমা মারে। এতে করে আমার বাবা আহত হন। পরে তিন দিন চিকিৎসার পর আজ (বৃহস্পতিবার) আমার বাবা মারা গেছেন। আমার বাবা স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক ছিলেন। এই হত্যার বিচার চাই আমরা।
পরাজিত নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের সমর্থক ও কালকিনির আলীনগর ইউনিয়নের চেয়াম্যান সাহিদ পারভেজ বলেন, একটি পক্ষ এই বোমা হামলার ঘটনার দোষ আমাদের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি বা আমাদের কোন লোক এই ঘটনার সাথে জড়িত না। বিজয় মিছিলে নিজেরাই আনন্দ করার জন্য ককটেল ফোটাতে ফোটাতে এসেছে। পরে নিজেদের ফোটা ককটেলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমিও চাই পুলিশ প্রশাসন এর সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচার করুক।
রাজধানী ঢাকার প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের সিইও ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, এমরাতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়ে যায়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার আগেই অবস্থা খারাপ ছিল। ভোরে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মাদারীপুর-৩ আসনের সদ্যবিজয়ী সংসদ সদস্য মোসা. তাহমিনা বেগম বলেন, ৭ তারিখে আমার নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করার পর, তারা বাড়িতে চলে যান। এরপর সকালে আলীনগর ইউনিয়নে তারা বিজয় মিছিল বের করে। সেই বিজয় মিছিলে আমার নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী ড.আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের লোকজন মিছিলের উপরে বোমা মারেন। বোমায় আমার কয়েকজন কর্মী আহত হন। এরমধ্যে দুইজন কর্মী গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে এমারত নামের আমার এক কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (বৃহস্পতিবার) মারা যান। আমি প্রশাসনের কাছে দাবী করবো, বিজয়ের পরে বিজয় মিছিল হতেই পারে। সেখানে প্রতিপক্ষ কিভাবে বোমা মেরে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়? এটা পরিকল্পিত এবং এর সঠিক বিচার প্রার্থণা করছি।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এদিকে এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।