স্বামী জাহিদুল ইসলামের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১২ বছর পরেও বিচার পাননি তার স্ত্রী ছবিরন নেছা। অবশেষে বিচারের দাবিতে অশ্রুসিক্ত নয়নে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। খুলনার কয়রা উপজেলার এই ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। নিহত জাহিদুল ইসলাম বাগালী ইউনিয়নের মৃত জালাল গাজীর পুত্র ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছবিরন নেছা। তিনি বলেন, তার স্বামী জাহিদুল একজন নিরীহ দিনমজুর ছিলেন। ২০১৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে কয়রা উপজেলা জামায়াতে ইসলামী একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করে। অভিযোগ অনুযায়ী, সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলটি জালালের মোড়ে পৌঁছালে তৎকালীন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব আলী সানার নির্দেশে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। ছবিরন নেছা অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা এলোপাথাড়ি গুলি ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। তার স্বামী জাহিদুল ইসলামের শরীরে একাধিক গুলি লাগে এবং তিনি মারাত্মকভাবে ঝলসে যান। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এমনকি, স্থানীয়দের উদ্যোগে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও হামলাকারীরা পুনরায় আক্রমণ করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শেষ পর্যন্ত তার স্বামীর মৃত্যু হয়। লিখিত বক্তব্যে ছবিরন আরও বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তারা। কিন্তু তৎকালীন সরকারের ভয়ে কেউই তাদের সাহায্য করতে সাহস পাননি। স্বামীর মৃত্যুর পর প্রশাসনের কাছে গেলেও আওয়ামী লীগের ভয়ে তার পিতৃকুল ও শ্বশুরকুলের লোকজন ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হন। বর্তমান সরকারের কাছে তিনি তার স্বামীর হত্যার ন্যায়বিচার চেয়েছেন এবং স্বৈরাচারী হামলাকারী ও তাদের দোসরদের সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে নিহত জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ছবিরন নেছা ছাড়াও তার বৃদ্ধা মাতা মজিদা খাতুন, কন্যা এবং ভাই ও বোন উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও বিচার না পাওয়ায় তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট ছিল।