নেয়ার কথা ইতালি কিন্তু লিবিয়ার বন্দিশালায় আটকে চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। ভিডিও কলে পরিবারের কাছে চাওয়া হয় মুক্তিপণ। ভিটেমাটি বিক্রি আর চড়া সুদে লাখ লাখ টাকা মাফিয়াদের হাতে তুলে দিলেও খোঁজ মিলছে না মাদারীপুরের শিবচরের অর্ধশত যুবকের। মূলহোতা আবুল কালাম মুন্সি গ্রেফতারের পর জামিনে বেরিয়ে ভুক্তভোগীদের একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করায় বাড়ছে আতঙ্ক। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে, মানবপাচার মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে শিগগিরই দেয়া হবে অভিযোগপত্র। কথা হয় মাদারীপুরের শিবচরের নিখলী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরকামারকান্দি গ্রামের দুবাই প্রবাসী মাসুদ মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, মুঠোফোনে যোগাযোগের পর ছোটভাই সোহাগ মোল্লাকে সরাসরি ইতালি পাঠাতে দালালচক্রের সঙ্গে চুক্তি হয় ১৪ লাখ টাকায়। একবছর আগে সোহাগকে প্রথমে শ্রীলঙ্কা, মিশর সবশেষ নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়। সেখানে মাফিয়াদের বন্দিশালায় আটকের পর নির্যাতন চালালে কয়েক দফায় মুক্তিপণের ৪৫ লাখ টাকা দিলেও খোঁজ নেই সোহাগের। শুধু সোহাগ মোল্লাই নয়, শিবচর উপজেলার সোহেল আহম্মেদ, মাসুম মুন্সিসহ অর্ধশত যুবক ভাগ্য বদলের আশায় ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছেড়ে একইভাবে এখন জিম্মি লিবিয়ায়। কারো কারো খোঁজও মিলছে না দুইমাস ধরে। যোগাযোগ নেই পরিবারের সঙ্গে। স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের হোসেনেরহাট এলাকার ইসলামি ব্যাংক-এর এজেন্ট আবুল কালাম মুন্সি ও তার সহযোগীদের প্রলোভনেই ঘটছে এমন ঘটনা। একাধিক মামলা হলে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জামিনে বেরিয়ে ভুক্তভোগীদের উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করায় বাড়ছে আতঙ্ক। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, মুক্তিপণের অধিকাংশ টাকা ইসলামী ব্যাংক-এজেন্ট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে লেনদেন করেন। অভিযুক্ত আবুল কালাম মুন্সি শিবচরের ‘লপ্ত সরকারের চর’ গ্রামের হায়দার মুন্সির ছেলে। এ ব্যাপারে প্রধান অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি, ব্যবহৃত মুঠোফোনেও বন্ধ রয়েছে। মাসুদ মোল্লা বলেন, ‘আমার ভাই সোহাগকে সরাসরি ইতালি নেয়ার কথা। কিন্তু লিবিয়ায় আটকে রেখে দালাল আবুল কালাম মুন্সি দিনের পর নির্যাতন করে। ভাইকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে মুক্তিপণের ৪৫ লাখ টাকা বিভিন্ন সময়ে দালালের হাতে তুলে দেই। কিন্তু আমার ভাই এখন কোথায় আছে জানি না। বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তাও জানি না। আমরা কয়েকজন দালাল আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলা করলে গ্রেফতার হয় সে। পরে জামিনে এসে উল্টো আমাদের মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।’ আরেক ভুক্তভোগী বিএম রুবেল বলেন, ‘আমার ভাই সোহেল আহম্মেদকে ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ইতালির উদ্দেশ্যে দালাল আবুল কালাম মুন্সির হাতে তুলে দেই। পরে সে লিবিয়া নিয়ে আমার ভাইকে বন্দি করে ফেলে। মাফিয়াদের মাধ্যমে নির্যাতন করে দফায় দফায় মোট ৫১ লাখ টাকা নেয় আমাদের কাছ থেকে। জমিজমা বিক্রি ও চড়া সুদে এই টাকা এনে দালালদের হাতে তুলে দেই। অধিকাংশ টাকা দালাল আবুল কালাম মুন্সির ইসলামী ব্যাংক এজেন্টের মাধ্যমে দেয়া হয়। আমরা এ ব্যাপারে মামলা করলে উল্টো আমাদের ফাঁসাতে দালালচক্র মামলা দিয়ে হয়রানি করেই যাচ্ছে। আমরা সবাই এর কঠিন বিচার চাই।’ মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শেখ সাব্বির হোসেন জানান, ‘অভিযুক্ত দালালদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনেও চলছে তদন্ত। কাজ করছে জেলার গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডিও। মানবপাচার মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে। এছাড়া বাদীপক্ষকে অন্য মামলা দিয়ে যদি হয়রানি করে তাহলে তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।