সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার চেলা নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনে সৃষ্ট ভাঙনে ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে নদীতীরবর্তী দুটি গ্রাম। শুধু তাতেই ক্ষান্ত নয়, অব্যাহত ভাঙনে আরও পাঁচটি গ্রামের আবাদি জমি, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসহ বিস্তীর্ণ এলাকা হুমকির সম্মুখীন। কয়েকবছর ধরে অব্যাহত এই ভাঙনে গ্রামগুলো গিলে খেলেও দেখার কেউ নেই। নদীর পাড় কেটে অব্যাহত বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট ভাঙনে ক্রমশ বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতঘর ও ফসলি জমি। নদীভাঙন থেকে আত্মরক্ষার্থে ইতোমধ্যে ঘরদোর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন নদীতীরের অনেক বাসিন্দা। সীমান্তবর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহমান খরস্রোতা চেলানদীর বালুমহাল বন্ধ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাড়িঘর ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চেলা নদীর উত্তরপাড় সারপিন পাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া, সানুর আলী, মইনুল ইসলাম, আরব আলী, মনির হোসেন, আব্দুস সালাম, সেলিম আহমদ, মন্তাজ আলীসহ অন্তত ৩০টি পরিবারের বসতঘর নদীভাঙনে বিলিন হয়েছে। স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গেল বছর চেলা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে নদীতীরবর্তী পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের ২০টি বসতঘর, একটি স্কুল ও কাস্টমস অফিস, সোনাপুর, দৌলতপুর, রহিমেরপাড়া ও সারপিনপাড়া গ্রামের অন্তত অর্ধশত বসতঘর ও গ্রামীণ সড়ক। পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের শাহজাহান জানান, একসময় তার দুই একর জমি ছিল। গেল দুই বছরে সেগুলো নদীতে ক্রমশ বিলীন হয়ে গেছে। গেল বছরে নদীতে বিলীন হয়েছে তার শেষ সম্বল বসতভিটেখানিও। বর্তমানে গ্রামের অন্যের ভিটে মাচা বেঁধে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘নদীতে যদি বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে নদী পার্শ্ববর্তী কোনো গ্রামের অস্তিত্ব থাকবেনা। সারপিনপাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া বলেন, চেলা নদী শুধু বাড়িঘরই ভেঙে নিচ্ছে না, মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি খরস্রোতা ওই নদী আমাদের গিলে খাচ্ছে। নিঃশেষ হয়ে গেছে আমাদের সব স্বপ্ন, জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। এযাবত পাঁচবার বসতবাড়ি সরাতে হয়েছে। জমিজমা সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের দেখার কেউ নেই। এলাকার কিছু অসাধু অর্থলোভী ব্যক্তি বিশেষ ও বিজিবি সদস্যদের যোগসাজশেই নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করায় আজ নদীপাড়ের মানুষজন দিশেহারা-ছন্নহারা। রহিমেরপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ফয়েজ উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরেও চেলা নদীর কুলঘেষা মানুষের জীবনমানের কথা কেউই চিন্তা করেনি। স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় অর্থলোভী কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এলাকার অনেক গ্রাম ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। তাই অভিশপ্ত চেলা নদীর বালু মহাল ইজারা বন্ধ করে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এদিকে স্থানীয় সোনালী চেলা বিজিবি (সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবি) ক্যাম্পের যোগসাজশে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের বিষয়টির ব্যপারে জানতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা জানান, অনেক সময় নৌকার মাঝিরা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন জায়গা হতে বালু উত্তোলন করতে যায়। বিজিবি সদস্যদের দেখামাত্রই তারা আবার দূরে সরে যায়। স্থানীয় নরসিংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন আহমদ জানান, চেলা নদীতে একটি অসাধু চক্রের মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করে ও পাড় কেটে বালু উত্তোলনের ফলে নদীপাড়ের মানুষদের বসতঘর বিলিন হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চেলার পাড়ের মানুষদের রক্ষা করতে হলে বালু মহাল ইজারা বন্ধ করা না হলে দেশের মানচিত্র থেকে অচিরেই ওই এলাকাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এবিষয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের কোন বিধান নেই। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।