ইসরায়েলের বিমান হামলার পাল্টা জবাবে ইরান সম্প্রতি শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে ব্যাপক সামরিক প্রতিশোধ নিয়েছে। গত সাত দিনে ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বহুল প্রশংসিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত আগামী দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামোকে চরম হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
যুদ্ধে ইরানে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৪০ জন, যাদের মধ্যে ৭০ জন নারী ও শিশু। অপরদিকে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ গেছে অন্তত ২৪ জনের এবং আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্ক সংকেতে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে জনসাধারণকে নিয়মিত আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটতে দেখা যাচ্ছে।
ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের আবাসিক এলাকা, এমনকি রাজধানী তেলআবিবের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর ‘কিরিয়া’তেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ইরান দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং মোসাদের একটি গোপন ঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষার প্রধান স্তম্ভ হলো ‘আয়রন ডোম’, যা স্বল্পপাল্লার রকেট প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়। তবে ইসরায়েলের বহিস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আরও রয়েছে বারাক-৮, ডেভিড’স স্লিং, থাড, অ্যারো-২ এবং অ্যারো-৩—যেগুলো বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সক্ষম। সঙ্গে রয়েছে রাডার, কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার ও স্বয়ংক্রিয় লঞ্চার প্রযুক্তি। প্রতিটি শত্রু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সাধারণত দুটি করে প্রতিরোধ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
তবে সাম্প্রতিক হামলায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ৮০-৯০ শতাংশ কার্যকারিতা স্বীকার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী, অর্থাৎ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা গণ্ডি ভেদ করেই নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান একযোগে বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সয়লাব করে দিচ্ছে। এই কৌশলে প্রকৃত হামলা আড়াল হয়ে যায় এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হয়। এছাড়াও, ইরান তাদের ফাত্তাহ-২ নামক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে, যার গতি শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি এবং যেটি অপ্রত্যাশিত গতিপথে চলতে পারে—ফলে একে প্রতিহত করা প্রায় অসম্ভব।
ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো হোভেইজেহ অত্যন্ত নিচু দিয়ে উড়ে দিক পরিবর্তনের সক্ষমতায় আকাশ প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। সঙ্গে যুক্ত হয় ভুয়া লক্ষ্যবস্তু বা ডিকয় ক্ষেপণাস্ত্র, যেগুলো রাডারকে বিভ্রান্ত করে মূল আক্রমণকে নিরাপদ করে তোলে। ইরান রাডার প্রতিরোধী প্রযুক্তিও ব্যবহার করছে, যার ফলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে।
চলমান যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দুই পক্ষের অস্ত্রভাণ্ডারের ধারাবাহিকতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থার সক্ষমতার ওপর। ইরান কতদিন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ বজায় রাখতে পারবে, কিংবা ইসরায়েল কতদিন তাদের ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখতে পারবে—তা এখন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।