মানবিকতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বরিশালের হাতেম আলী কলেজের শিক্ষার্থী মো. সাগর ও চিংড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব। কুড়িয়ে পাওয়া ১ লাখ ৩ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও দুটি স্মার্টফোন প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দিয়ে তাঁরা প্রমাণ করেছেন— সততা এখনো বেঁচে আছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (২১ জুন) ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার আমরিবুনিয়া গ্রামে। জানা গেছে, ওই গ্রামের বাসিন্দা ও হাতেম আলী কলেজের একাউন্টিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাগর এবং চিংড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিব সকালবেলা হাঁটতে বের হন। পথে আমরিবুনিয়া-চিংড়াখালী সড়কের আওলাদ মোল্লার বাড়ির সামনে একটি পরিত্যক্ত ব্যাগ দেখতে পান তারা। ব্যাগ খুলে তাঁরা দেখতে পান ১ লাখ ৩ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার এবং দুটি স্মার্টফোন। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তারা পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনদের জানান এবং প্রকৃত মালিক খুঁজে বের করতে উদ্যোগ নেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাগে থাকা একটি ফোনে কল আসে। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে জানা যায়—ব্যাগটির মালিক চিংড়াখালী গ্রামের মো. ছোবহান বিডিআরের মেয়ে সুমি আক্তার। তিনি সকালে বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে অসাবধানতাবশত ব্যাগটি হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে সাগর ও সাকিব ব্যাগটি তার সমস্ত মালামালসহ সুমির হাতে তুলে দেন। সাগর বলেন, “ব্যাগে এত টাকা দেখে আমরা প্রথমে হতবাক হয়ে যাই। মনে হলো, এটি কারো খুব প্রয়োজনীয় কাজের টাকা হতে পারে। তাই এক মুহূর্ত দেরি না করে প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আজ সেটি ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা স্বস্তি বোধ করছি।” হারানো ব্যাগ ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত সুমি আক্তার বলেন, “আমরা ভীষণভাবে মানসিক চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। ভাবিনি কেউ এত সততা দেখাতে পারে। সাগর ও সাকিবের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।” সাগর ও সাকিবের এই সততার কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের ভাষায়, “এই সময়েও এমন মানবিক ও সৎ তরুণ সমাজের জন্য সত্যিই অনুপ্রেরণা।” উল্লেখ্য, সাগর একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা মনেচ মিয়া একজন দিনমজুর। অপরদিকে সাকিব একই গ্রামের মন্টু হাওলাদারের ছেলে। প্রতিকূলতা ও সীমিত সম্পদের মাঝেও তারা যে সততা ও বিবেকের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা নিঃসন্দেহে সমাজের জন্য অনুকরণীয়।