বোন সেতু আক্তার আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত ও বিচার চেয়ে সংবাদ সংবাদ সন্মেলন।
গতকাল শনিবার ১২ই জুলাই সন্ধা ৬টায় বদলগাছীর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে সংবাদ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সন্মেলনে বক্তব্য রাখেন সেতু আক্তারের ভাই মুশফিকুর, তিনি বলেন গত বৃহস্পতিবার ৩রা জুলাই আমার বোন মারা যায় সে বিষয়ে কথা বলার জন্য এখানে এসেছি। গত দেড় বছর আগে চাংলা গ্রামের আফজাল হোসেনের পুত্র রায়হান রণির সাথে আমার ছোট বোন সেতু আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের একটু প্রেমের সম্পর্ক ছিলো সেটা আসলে জানাজানি হয় তাই পারিবারিক ভাবে বিয়েটি মেনে নেই। ১বছর ঠিকঠাক ভাবেই সংসার চলছিলো। ১বছর পর আমার বোনের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার যৌতুকের চাহিদায় আমার বোনকে এই রায়হান রণি এবং তার মা
অত্যাচার শুরু করে, বোন আমাদের কে এই বিষয়ে অবগত করলে আমরা বোনকে বুঝাই ব্যাপারটা এবং সংসার করার পরামর্শ দেয়।
ঘটনার দিন গত ৩ই জুলাই বৃহস্পতিবার গ্রামবাসীর মাধ্যমে জানতে পারি আমার বোন খুবই অসুস্থ। খবর পেয়ে আমরা এসে দেখি আমার বোনের শয়নঘরে আমার বোনের মরদেহ পড়ে আছে। ঘাতক রায়হান রণি ও তার মা সেই সময় পলাতক।
পুলিশ আমাদেরকে বলে আপনারা শান্ত হোন, আমরা সঠিক তদন্ত করবো এই মুহূর্তে আপনারা থানায় চলেন। মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করতে হবে। পুলিশ বলার পর আমরা থানায় যাই মরদেহ নিয়ে। তারপর মেঝ ভাইয়ের আইডি কার্ড দিয়ে পোস্টমর্টেমের জন্য সই নেয়। সেই সময় আসলে মেন্টালি খুবই ছিলাম,
কোথায় কিভাবে কি করতেছে আমরা আসলে বোঝার মতো ইয়ে ছিলো না আমাদের। পুলিশ আমাদের বলে পোস্টমর্টেম করতে হবে সেজন্য আমাদের তাই সই নেয় মেঝো ভাই সেখানে সই করে,সেখান থেকে আমাদের পাঠিয়ে দেয় নওগাঁ সদর হাসপাতালে পোস্টমর্টেমের জন্য লাশ নিয়ে আমরা সেখানে যাই। পোস্টমর্টেম করবার পর লাশ নিয়ে আমরা ঠিক আসরের পরে বিকেল ৪টার দিকে বাসায় যাই এবং রাত ১০ পর পর্যন্ত সময় লেগে যায় দাফন করতে।
পরের দিন আমরা যখন থানায় আসি আমরা বলি যে গতকাল আমরা ইয়ে মানে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম কোথায় কি করলাম আমরা দেখবো।
তা সে মুহূর্তে কেন পেপার্স আমাদের দেয় নি, যে এ রকম কোন পেপার্স দেওয়া যাবে না।শনিবার যখন আমরা থানায় আসলাম আমাদের পেপার্স দেওয়া হলো সেই পেপার্স দেখে আমরা পুরাই আকাশ থেকে পড়ি যেটা আসলে আমরা সহ্য করতে পারি না। এই পেপার্সে তারা উল্লেখ করেছে যে গত তিন মাস যাবত পেট ব্যাথায় ভুকছিলো তারা আরও উল্লেখ করেছে আমার বোন পেট ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করবে বলে বলাবলি করতো। হঠাৎ করে গত বুধবার সে গলায় দড়ি দিয়েছে।
আমার বোনের যে পেটে ব্যাথা আমরা অবগত না পুলিশ এই কথা গুলো আসলে কোথায় পেয়েছিলো,কার থেকে শুনেছিলো? এস আই মুনিরুলের কে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, স্যার এই কথা গুলো আপনারা কোথায় পেয়েছিলেন, এস আই মুনিরুল বলেছিলো গ্রামবাসীর থেকে শুনেছি। আমরা বলেছিলাম গ্রামবাসীর কথা অথচ আমার বোন আমাদেরকে কোন দিনই বলে নাই। ওসি স্যার আনিছুর রহমান যে ভাবে বলেছে আমি আসলে সে ভাবে করেছি।
আমি দেশবাসীর কাছে সংবাদ সন্মেলন বা এই প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে বলতে চাই, আমার বোনের সঠিক বিচার চাই। পুলিশ আমাদের থেকে কেন মামলা নেয় নি।থানার কাছে কোন হেল্প না পেয়ে আমরা কোর্টে গিয়েছি এবং কোর্টে এই বিষয়ে আমরা মামলা করি। আসলে সমগ্র দেশবাসীর কাছে আমার একটাই প্রত্যাশা আমাদের পরিবারের একটা প্রত্যাশা আমরা সঠিক একটা বিচার চাই। আমার বোন যে মারা গেছে এটার সঠিক তদন্ত আমরা চাই। আমরা আসলে থানার কাছে খুব বেশি উপকৃত হয়নি। এই জন্যই আমরা কের্টের দাড়ে আমরা গিয়েছিলাম।
এই সময় নিহতের ভাইয়ের কাছে জানতে চাইলাম
থানার মামলার কপিতে দেখতে পাচ্ছি আপনার বোনের তীব্র পেট ব্যাথা সে মুলত আত্মহত্যা করেছে এই বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?
মুশফিকুর বলেন,আসলে পেট ব্যাথার এ রকমতথ্য আমাদের কাছে ছিলো না। যদি তিন মাস যাবত আমার বোনের পেট ব্যাথা হয়ে থাকে তাহলে ব্যাপারটা আমরা জানতাম।বা তাদের উচিত ছিলো আমাদের জানানো,তারা তো আমাদের জানায় নি। তারা হাসপাতালে নিয়ে গেছে কিনা সেটাও আমাদের বলে নি।যদি আমাদের বলতো আমার বোন আত্মহত্যা করবে এই জাতীয় আমরা নিজে থেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতাম। এই রকম কিছু ছিলো না সেখানে। তারা কখনো কোন ভাবেই জানায় নি। হটাৎ করে পেট ব্যাথা কথা কোথায় থেকে আসলো। আমার বোনকে যদি আসলে তারা মেরে না ফেলবে আমার বোন যদি আত্মহত্যাই করবে এখানে যে ভাবে তারা লিখেছে তারা তখন পালিয়ে গেলো কেন?তারা বাসায় থাকলো না কেন।
আপনাদের কাছে কি মনে হচ্ছে আপনার বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে?
অবশ্যই আমার বোনকে মার্ডার করা হয়েছে।
কিভাবে মনে হচ্ছে আপনাদের?
আমি আসলে যেভাবে শয়ন কক্ষে আমার বোন মরা অবস্থায় শুয়ে ছিল।
একটা মানুষকে যখন গলা টিপে মেরে ফেলা হয় তখন তার গলায় হাতের দাগ থাকে, আর যদি কেউ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ওড়না পিছিয়ে তাহলে তার গলার চারিদিকে দাগ থাকে। সেই ঘরে আসলে আত্মহত্যা করার মতো কোনো বাঁশ ছিল না যেখানে আমার বোনের মরদেহ পড়েছিল।
এ সময় নিহত আরও বক্তব্য রাখেন নাসির আক্তার মিলন। সংবাদ সন্মেলনে সাংবাদিকদের উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের বদলগাছী উপজেলা প্রতিনিধি সৈকত সোবহান, এনটিভির মহাদেবপুর-বদলগাছী প্রতিনিধি মিঠু হাসান, বিজয় টিভির বদলগাছী প্রতিনিধি রায়হান হোসেন, ঢাকা প্রতিদিনের বদলগাছী প্রতিনিধি মোস্তাকিম, এশিয়ান টিভির বদলগাছী প্রতিনিধি বুলবুল আহাম্মেদ বুলু, উজ্জ্বল হোসেন,জাহাঙ্গীর।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, সুরুতহার রিপোর্টে কোন জখমের চিহ্ন না পাওয়ায় বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইউডি মামলা রেকর্ড করে লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।