ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাইয়ের পীর সাহেব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থী সকল রাজনৈতিক দলের ভোট এক বাক্সে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।যদি ইসলামী দলগুলোর সব ভোট এক বাক্সে আনতে পারি তাহলে ইসলামী দলগুলোই হবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় শক্তি”।
গতকাল ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংস্কার , বিচার ও সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে সভাপতির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। সমাপনী ভাষণে তিনি বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ওলামায়ে কেরামদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। নারীদেরকে পণ্য বানাতে দিব না বরং নারীর মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। তিনি বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে শান্তি ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক চায়, সহযোগিতার সম্পর্ক চায়, আগ্রাসী মনোভাব ও অবৈধ হস্তক্ষেপ বরদাশত করবে না।
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কখনোই অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি, শর্টকাট পথে ক্ষমতায় যেতে চায়নি এবং নীতি বিসর্জন দেয়নি।
তিনি আরো বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ছিল ৫৪ বছরের জঞ্জাল দূর হবে,পতিত স্বৈরাচারের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিচার হবে,গণহত্যাকারীদের বিচার হবে।তাই, অনতিবিলম্বে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যারা হাজার হাজার ছাত্র-জনতা হত্যায় জড়িত তাদের দেশে এনে বিচার করতে হবে।
শাসনব্যবস্থার সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী সংসদে সকল মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কার এখনই করতে হবে, পতিত স্বৈরাচারের বিচারও করতে হবে। তিনি বলেন,’৭২ এর সংবিধান এদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয় নাই। এমনকি সেই সংবিধান রচনার বৈধ ম্যান্ডেটও তৎকালীন সরকারের ছিল না।
মহাসমাবেশে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন,২হাজার ছাত্র-জনতার আত্মাহুতি, হাজার হাজার মানুষের রক্ত ও পঙ্গুত্ব, অসংখ্য গুম-খুন, হুলিয়া-মামলার দায়ভার মাথায় নিয়ে অর্জিত বিজয় ব্যর্থ হতে দিব না। নির্বাচনের আগে গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা দিল্লীতে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করতে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা নিরপেক্ষতার শপথ নিয়েছেন,শপথ ভঙ্গ করবেন না।
তিনি আরো বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্মানিত আমীর ও চরমোনাইয়ের পীর সাহেব মুফতী ফজলুল করিম সাহেব সকল ইসলামী দলকে একই প্ল্যাটফর্মে আনতে যে উদারতা ও মহানুভবতার পরিচয় দিচ্ছেন তা ইতিহাস হয়ে থাকবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করিম বলেন,পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার সংস্কার এবং গণহত্যাকারীদের বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার দেশের নাগরিকদেরকে জোর করে বাংলাদেশে পুশ ইন করবেন না।পুশ ইন যদি করতেই হয়,ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ ভারতে আশ্রয় নেওয়া দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী ও গণহত্যাকারী আওয়ামী মন্ত্রী এমপিদের পুশ ইন করুন। তিনি আরো বলেন, ইসলামী দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনতে পারলে ইসলামকে ক্ষমতায় বসানো সম্ভব। মানুষের রচিত সংবিধান বিগত দিনে ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছে।তাই, কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে দেশ পরিচালিত হলে সন্ত্রাস দুর্নীতি গুম খুন থাকবে না। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, আগামী নির্বাচনে কোনো চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত দলকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের হাতে দেশ তুলে দিলে তা হবে দুই হাজার শহীদ ও হাজার হাজার আহত-পঙ্গুদের সাথে স্রেফ বেঈমানি।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর তার বক্তৃতায় বলেন,’২৪এর গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সংস্কারে যে গণ আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনে যে রাজনৈতিক ও জন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে সেই সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবিতে আজকে বোধ হয় দু-একটি দল বাদে সব দল এই মঞ্চে হাজির হয়ে তাদের দলীয় অবস্থান ব্যক্ত করেছে। তিনি বলেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলে সমস্যাটা কী ? প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দশ বছর হলে সমস্যাটা কী ?
সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দু-একটি দলকে প্রাধান্য দিয়ে বেশিরভাগ জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার দুঃসাহস দেখাবেন না। দু-একটি দলের কথায় সংস্কারের নকশায় পরিবর্তন আনা যাবে না।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডঃ কামাল হোসেন বলেছিলেন-শেখ মুজিব আমাদের নেতা ছিলেন। আমরা তার কথা চিন্তা করে ও মাথায় রেখে এই সংবিধান রচনা করেছিলাম তাকে এমপাওয়ার করতে। আজকে মনে হচ্ছে ঐক্যমত কমিশন কেনো জানি দু-একটি দলের কথা মাথায় রেখে সংস্কার করতে চায়। তিনি আরো বলেন,এই সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেমন হবে,একই সাথে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও হতে হবে।
মহাসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে ১৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন দলটির মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
মহাসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ,সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মুফতী রেজাউল করিম আবরার,এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, ডঃ ফয়জুল হক,হযরত মাওলানা আব্দুল হক আউয়াল প্রমুখ।