পুরুষ নারীর সৌন্দর্যের পূজারী। নারীর রুপগুন পুরুষকে কাছে টানে সবসময়ই। আর সেই নারী যদি পুরুষকে কাছে টানে তাহলে তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনই এক নারী খুলনার ইউটিউবার টিকটকার সুমাইয়া জান্নাত। যার আরেক নাম প্রিয়া আক্তার। অনেক পুরুষকেই কাছে টেনেছেন তার রুপ যৌবনের মায়ায়। তবে সেটা ছিলো শুধুই প্রতারণা। অর্থ উপার্জনের একটি ধুম্র জাল মাত্র। রুপগুনের পাশাপাশি কাগজপত্র এফিডেভিটের মাধ্যমে ফাঁসিয়েছেন অনেক পুরুষকে, করেছেন সর্বশান্ত। প্রথমে প্রেম, পরে বিয়ে, এরপর মামলা হামলা ও প্রতারণার মাধ্যমে নিঃস্ব করে ছেড়েছেন ঐসকল পুরুষের পরিবারটিকে। এই দুই নামের একই নারী প্রেমিক পুরুষের সাথে অশ্লীল ছবি তুলে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিতে করেছেন ব্লাক মেইল।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার মাদ্রাসা গলির বাসিন্দা হানিফ মিয়া ও রিতা পারভিনের মেয়ে সুমাইয়া। ১০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর এস এম আশরাফুল আলমের সাথে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। পরে তা ছিন্নও হয়ে যায়। এরপর একে একে বাদশা, মানিক, শিবলী, জিতুসহ আরও অনেক’কে বিয়ে করেছেন প্রিয়া।
এদিকে বহু বিবাহের প্রিয়ার হাত থেকে বাঁচতে সাহায্যের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে খালিশপুর নয়াবাটি এলাকার ১৬ বছর বয়সী কিশোর মোঃ তরিকুজ্জামান বিজয় ও তার পরিবার।
ভুক্তভোগী বিজয়ের পিতা আশরাফুজ্জামান চন্দন বলেন, তরিকুজ্জামান বিজয়ের সাথে পরিচয় হয় প্রিয়ার। সেই সুবাদে বিভিন্ন সময় মোবাইলে ফোনালাপ এর মাধ্যমে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রিয়া বিজয়কে বিভিন্ন জায়গায় টিকটক করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় এবং প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে মেলামেশা করে। এরই মাঝে আটকে রেখে কৌশলে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিজয়কে বিয়ে করে প্রিয়া।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে ব্ল্যাকমেইল করার উদ্দেশ্যে অশ্লীল ছবি তুলে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নগদ টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে কৌশলে বিজয়কে অপহরণ করে প্রিয়া। এ বিষয়ে খালিশপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। যার নং-১৭৭৩, তারিখ ৩১ মে ২০২৪। পরবর্তীতে খালিশপুর থানা পুলিশ যশোরের মনিরামপুর থেকে বিজয়কে উদ্ধার করে। এদিকে প্রিয়ার চাহিদা মত টাকা না দেয়ায় সোনাডাঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯/১ ধারায় একটি মামলা করেন প্রিয়া। যার নাম্বার ১০। ৪ নভেম্বর ২০২৪।
এদিকে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে ধর্ষণকারীর শাস্তির দাবিতে একটি মানববন্ধন করেন প্রিয়া ও তার লোকজন। তবে এ সংক্রান্ত নুসন্ধানে জানা যায়, ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন, স্কুল সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট সিভিল সার্জন সার্টিফিকেট ও নাম সংশোধন এফিডেভিট দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েকটি পরিবারকে সর্বশান্ত করেছে পিয়া আক্তার।
যেখানে দেখা যায়, প্রিয়ার ভোটার আইডি, স্কুল সার্টিফিকেট ও পাসপোর্টের জন্ম তারিখের হেরফের প্রায় ১০ বছর। বয়স (২২) কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড ও পাসপোর্টে জন্ম তারিখ ২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ দেয়া আছে যাতে তার বয়স দাঁড়ায় ৩২। এছাড়াও স্কুল সার্টিফিকেট ও ভোটার আইডিতে নামের মিল নেই। ভোটার আইডতে সুমাইয়া জান্নাত ও স্কুলের প্রশংসাপত্রে প্রিয়া আক্তার।
জানা যায় প্রিয়া আক্তার বয়স লুকাতে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর বিজ্ঞ সিনিয়র জুটিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে সংশোধন সম্পর্কিত এফিডেভিট করে। যার নং ৩৬১২।
এ বিষয়ে প্রিয়া বলেন, আশরাফুল আলম বাসারের সাথে আমার কানো বিয়ে হয়নি। এর আগে আমার কোন বিয়ে ছিল না। এতদিন তারা মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়েছে তাই কিছু বলিনি। বিজয় আর আমার সম্পর্কের ফলে আমি প্রেগন্যান্ট হই। আমার স্বীকৃতির জন্য ছেলের বাবার পা পর্যন্ত ধরেও স্বীকৃতি মেলেনি। এজন্য আমি মামলা করতে বাধ্য হই।
এ ব্যপারে সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সুমাইয়া জান্নাত প্রিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯/১ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার আসামি তরিকুজ্জামান বিজয়কে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে মামলার তদন্ত চলছে।