নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেছেন, “শিক্ষা মানব সভ্যতার বিকাশের অন্যতম উপাদান হলেও তা আজ সংকুচিত হয়ে পড়েছে কেবল জিপিএ-৫ অর্জন ও চাকরি পাওয়ার মধ্যে। কিন্তু ‘পাস’ করা আর ‘শিক্ষিত’ হওয়া এক কথা নয়। পাসের হার বাড়লেও গুণগত শিক্ষা বাড়ছে না। সন্তান কতটা মানসম্মতভাবে শিক্ষা অর্জন করছে, সে দিকেই এখন অভিভাবকদের নজর নেই— সবাই ব্যস্ত শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের পেছনে।” নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে ‘শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “অর্থের বিনিময়ে অর্জিত শিক্ষায় দেশপ্রেম, ভদ্রতা, মানবিকতা ও মূল্যবোধ আজ বিলুপ্তির পথে। তরুণ প্রজন্ম এখন কল্পনার জগতে বসবাস করছে। তারা কাকে অনুসরণ করবে, কাদের আদর্শে নিজের স্বপ্ন গড়বে, সেই পথনির্দেশনাও পাচ্ছে না। বাস্তবতা ও মানবিক গুণাবলি না শেখাতে পারলে এই প্রজন্মকে সঠিক পথে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।” শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা অনেক সময় তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করতে পারছে না। আগ্রহ তৈরি না হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে। এর ফলেই আমরা পরীক্ষা-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে হতাশা, মানসিক চাপ ও ক্লান্তিতে ভোগা শিক্ষার্থীদের দেখতে পাই, যারা পরবর্তীতে ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলার মতো কাজেও জড়িয়ে পড়ছে। এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার নৈতিক ও মানসিক দুর্বলতার প্রতিফলন।” মতবিনিময় সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের সভাপতিত্ব করেন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান। মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনূর রশিদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, প্রশাসনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনীতিক, শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিরা।