মনোয়ারা বেগম নারায়ণগঞ্জ থেকে স্বামীর সঙ্গে বাবার বাড়ি লালমনিরহাটে ফিরছিলেন। বুধবার রাত সাড়ে দশটার দিকে কমলাপুর থেকে ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে করে তারা রওনা দেন। মনোয়ারা বেগমের স্বামী আনারুল ইসলাম পেশায় একজন রডমিস্ত্রি মনোয়ারা বেগম ও এক সন্তানকে নিয়ে এতদিন নারায়নগঞ্জে ছিলেন তিনি। আবারও তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ায় চিকিৎসকের দেওয়া প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের এক মাস আগেই মনোয়ারার বাবার বাড়ি লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক(টিটিই) জাকিরুল ইসলাম বলেন, কমলাপুর থেকে ট্রেনে উঠে ওই দম্পতি। পরে হঠাৎ ‘গ’ বগিতে চিল্লাচিল্লি শুনে সেখানে গিয়ে দেখি তার প্রসববেদনা উঠেছে। পরে তাকে সাহায্যের জন্য অন্যান্য নারীযাত্রী, রেলওয়ে পুলিশসহ সকলেই এগিয়ে আসে। ভাগ্যক্রমে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. জহির উদ্দিন মো. বাবরকেও আমরা সেখানেই পেয়ে যাই।
ডাঃজহির উদ্দিন মোঃবাবর বলেন, আমি কাজ শেষে পাটগ্রামে ফিরছিলাম। রাতে ট্রেনে অনেকেই একজন চিকিৎসক খুঁজছিলেন, ফলে আমি এগিয়ে যাই সেখানে। বাচ্চাটা প্রসবের পর ‘জরায়ুর ফুল (প্ল্যাসেন্টা) সম্পূর্ণ আটকে ছিল। এটা দ্রুত বের করতে না পারলে রক্তক্ষরণের কারণে মায়ের মৃত্যু হতে পারে। ফলে সেটা আমার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অনেকটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে আমি তা নিরাপদে বের করতে সক্ষম হই। মা-সন্তান এখন দুজনেই ভালো আছেন বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাট রেলওয়ে থানার পরিদর্শক ফেরদৌস আলী জানান, প্রসবের পর চিকিৎসকের পরামর্শে মা-সন্তানকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে নামিয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের টহল গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। পরে তাদের সেখানকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না থাকায় গতকাল মঙ্গলবার সকালের দিকে উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সন্ধ্যায় সেখান থেকে তারা মনোয়ারা বেগমের বাবার বাড়ি লালমনিরহাট শহরের শাহজাহান কলোনীতে চলে আসেন।
মনোয়ারার স্বামী আনারুল ইসলাম বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ নানা পরীক্ষার পর চিকিৎসক সম্ভাব্য প্রসবের দিন আগামী ২৮ ডিসেম্বর বলে জানিয়েছিলেন। তাই একমাস আগেই স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসছিলাম নিরাপদ প্রসবের জন্য। কিন্তু ট্রেনেই আমার ছেলের জন্ম হয়।
মনোয়ারা বেগম বলেন, এমনটি হবে এটা আমি বুঝতে পারিনি। তবে ট্রেনে অনেক মানুষের সাহায্যে আমি বেঁচে গেছি। তাদের কথা আমি কোনো দিন ভুলতে পারবো না।