বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান অন্তরবর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, সরকারকে মনে রাখতে হবে আপনারা স্থায়ী সরকার নন, আপনারা নির্বাচিত সরকারও নন। আপনার অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার, অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার মানে আগের সরকার এবং পরের একটি সরকারের মাঝখানের সরকার আপনারা। আপনাদের একটা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্ব পালন করে আপনাদের চলে যেতে হবে। জনগণ স্থায়ী সরকার চায়।
শনিবার (২৪ মে) বিকেলে বগুড়ার সূত্রাপুর সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আলোচনা সাপেক্ষে শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন জুনের মধ্যে প্রস্তুতির কথা বলেছে, তাহলে ডিসেম্বরের নির্বাচন সম্ভব।”
ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, সংস্কার কমিশন ও সংস্কার কমিশনের ঐক্যমত কমিশনের প্রধান বলছে, জুন মাসের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি দুটিই যদি সম্পন্ন হয়; তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচনে সমস্যা কোথায়? যারা বলেন ডিসেম্বরের পরে হবে নির্বাচন। তারা যুক্তি দিয়ে বলেন কেন ডিসেম্বরের পরে সময় দরকার আপনাদের?সিনিয়র এই নেতা বলেন, বারবার আমাদের বিজয়কে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদেশে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম। স্বাধীনতার মাধ্যমে গণতন্ত্র অর্জন করেছিলাম। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে আমাদের সেই গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে এক দলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। সেই একদলীয় বাকশাল শাসনের অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। আমরা একবার অর্জন করলাম আবার হারিয়ে ফেললাম, আবার অর্জন করলাম তারপরে শহীদ জিয়াউর রহমান নিহত হলেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে তাকে জীবন দিতে হলো। এক বছর যেতে না যেতেই বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরশাসন কায়েম হল। আমরা গণতন্ত্র হারালাম, সেই হারানো গণতন্ত্রকে পূর্ণ উদ্ধার করার জন্য আমরা আমাদের মা গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৯ বছর অবিরাম লড়াই করে আবার আমরা সংসদীয় গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু তাও রক্ষা করা যায়নি, তথাকথিত গণতন্ত্রের দাবিদার আওয়ামীলীগ বলে তাদের আন্দোলনের ফসল একএগারো সরকার। গণতন্ত্রকে পুনরায় জবাই করেছে। জরুরি অবস্থা জারি করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। আবারো হারিয়েছি গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন করতে হয়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং তাকে অন্যায় ভাবে তারা কারারুদ্ধ করে, তারপর থেকে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অবিরাম লড়াই হয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সেই লড়াই ইতিহাসের প্রথমবারের মতো তারেক রহমানের নেতৃত্বে ডানপন্থী, বামপন্থী, সবাইকে এক কাতারে আনা হয়েছে। আমরা যুগোপথ আন্দোলনের মাধ্যমে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের মসনদে কাঁপন ধরিয়েছি। জুলাই-আগস্ট এর গণঅভ্যর্থনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ পলায়ন করেছে এবং বাংলাদেশ আবার নতুন সম্ভাবনার দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়েছে। এই সম্ভাবনা কেউ নস্যাৎ করার চক্রান্ত করছে। বাংলাদেশের মানুষ এক দফার দাবিতে আন্দোলন করেছে ফ্যাসিবাদের পতন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক দফার একটা অংশ আদায় হয়েছে আরেকটি অংশ এখনো আদায় হয় নাই। সেটি প্রধান কাজ, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই প্রধান লক্ষ্য। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই প্রধান কাজ। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যারা বলেন ডিসেম্বরের পরে হবে নির্বাচন, তারা যুক্তি দিয়ে বলেন কি কারণে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন। কোন কোন দল এখনো সংঘটিত হয় নাই, তাদের সংঘটিত হওয়ার জন্য সময় দরকার। কোন কোন দল অন্যান্যদের সাথে ঐক্য করার চেষ্টা করছে তাদের সময় দরকার। এই সময় দেওয়ার জন্য আমরা তো নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। জনগণ এই কারণে সময় দিতে রাজি না। সেজন্যই আমরা বলি যে এক দফার জন্য আমাদের হাজারো ভাই খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, আহত হয়েছে, জেল খেটেছে, সেই এক দফার অবশিষ্ট প্রথম কাজ হবে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে যারা সামনের কাতারে ছিলেন সেই তরুণ সমাজকে সামনের কাতারে থাকতে হবে। শহীদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী, বেগম খালেদা জিয়াও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিশ্বাসী এই তরুণ সমাজ আপনারা কি সেই লড়াইয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে রাজি আছেন থাকলে দুই হাত তুলে বলুন। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা রাজি আছেন এই লড়াইয়ে বাধা দেওয়া ও প্রতিরোধ করার ক্ষমতা এই দেশের কারণ নেই কখনো নেই আগামীতেও থাকবে না।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী সরকার বাংলাদেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রশাসনিক, সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। আর সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণ গঠনের জন্য আমাদের নেতা তারেক রহমান আন্দোলনরত যুগোপথের সব রাজনৈতিক দলের পরামর্শ নিয়ে ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা ঘোষণা দিয়েছে। ৩১ দফার বাইরে নতুন কোন কিছু তাদের মাথা থেকে আসে না। তারা যেসব পরিবর্তনের কথা বলছেন, ৩১ দফাতে সব প্রস্তাবনা রয়েছে। তাই সংস্কার প্রয়োজন নিঃসন্দেহে, আমরা বলেছি একটা অবাক সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার জরুরী আলোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ করে দ্রুত জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন আমরা বলেছি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। আমরা বলেছি নির্বাচন কমিশন বলেছে জুন মাসের মধ্যে তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে সংস্কার কমিশনের ঐক্যমত্য কমিশনার প্রধান বলেছে মাধ্যমে আগামী এক মাসের মধ্যে তারা রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে যে আলোচনা করেছেন তার সেই আলোকে একটি সনদ তৈরি করতে পারবেন। তাই জুন মাসের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি দুটোই সম্পন্ন হয় তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে সমস্যা নেই।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদল কেন্দ্রীয কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, বিশেষ বক্তা স্বেচ্ছাসেবকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী।
বক্তব্য রাখেন যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাম, রুজ্জামান জুয়েল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াইহিয়া। সমাবেশে সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মোঃ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহিন সওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, ওবায়দুল রহমান চন্দন, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডঃ মাঈনুল হাসান সাদিক, রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম, আলী আজগর তালুকদার হেনা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকির, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ উন নবী সালাম, কেএম খায়রুল বাশার, সাবেক এমপি রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান, জেলা স্বেচ্ছসেবকদলের সভাপতি সরকার মুকুল, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শুভ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাবিবুর রশিদ সন্ধান সরকার, সাধারণ সম্পাদক এম আর হাসান পলাশ, শহর যুবদলের সভাপতি আহসান হাবিব মমি, সাধারণ সম্পাদক আদিল শাহরিয়ার গোর্কী, শহর ছাত্রদলে সভাপতি এসএম রাঙ্গা, সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান রিমন।