ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর যশোর থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী নেতা নেতারা গা ঢাকা দিলেও, তাদের আশ্রিত সন্ত্রাসী, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা প্রকাশ্যেই তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মনে গভীর ক্ষোভ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।
শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে যশোর অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিলো। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ বিভিন্ন পর্যা পর্যায়ের দলীয় ও সহযোগী
সংগঠনের পদধারী নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা রমরমা হয়ে ওঠে। এমনকি, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদও চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নোংরা রাজনীতিতে মেতে উঠেছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। এর পরপরই যশোরের পদধারী আওয়ামী লীগ নেতারাও গোপনে আত্মগোপনে চলে যান। আশ্রয়দাতারা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের আশ্রিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরাও কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে তারা [পৃষ্ঠা-২ কলাম ১]
যশোরজুড়ে পদ-পদবিহীন আওয়ামী লীগ আবারও এলাকায় ফিরে এসে পূর্বের ন্যায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের
ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যশোরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বারান্দী মোল্লাপাড়া ঢাকা রোডের আউয়াল মিস্ত্রির দুই ছেলে শাকির ওরফে শাকিল এবং আরিফ বিশেষভাবে আলোচিত। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের আশ্রয়ে থেকে এই দুই ভাই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা চালাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতঃপূর্বে শাকির ও আরিফ বিদেশি পিস্তলসহ র্যাবের হাতে আটকও হয়েছিলেন। এমনকি, ইছালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন হত্যাকা-ে আরিফের সরবরাহ করা পিস্তল ব্যবহৃত হয়েছিলো, যার কারণে সিআইডি তাকে মামলার চার্জশিটে আসামি করেছিলো। এত কিছুর পরেও এই দুই ভাই বর্তমানে এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের আশ্রিত পূর্ব বারান্দীপাড়ার আরেক আলোচিত মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী হলো কসাই মনির। তার স্ত্রী শ্যামলীও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। স্থানীয়রা জানিয়েছে, তারাও প্রকাশ্যেই এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু পুলিশ তাদের আটকের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জনসাধারণ কয়েকবার ধরে পুলিশে দিলেও জামিনে বেরিয়ে আবার সেই একই কাজ করছে।
কুমঝুমপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে আলোচিত জাভেদ ও তার সহযোগীরা (সবুজ, সোহেল, ছোট মনি, চায়না রাজু, নাসির, চয়ন, পলাশ, হাসান) ৫ আগস্টের পর জনরোষের ভয়ে আত্মগোপন করলেও, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে তারা আবারও এলাকায় ফিরে এসেছে এবং প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছে। এই সন্ত্রাসীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের লোক হিসেবে পরিচিত। জাভেদ একাধিক হত্যা মামলার আসামি এবং তার বিরুদ্ধে মাদকের ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তাদের উপস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
শহরের পুরাতন কসবা এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রিত ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত।। এসব সন্ত্রাসীর সর্বশেষ আশ্রয়দাতা ছিলেন জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক বিতর্কিত শেখ জাহিদ হোসেন মিলন, যিনি আবার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী। এই সন্ত্রাসীদের মধ্যে রয়েছে ইয়াছিন মোহাম্মদ কাজল, আমিরুল, ডাবলু ওরফে ইয়াবা ডাবলু, সাগর ওরফে ইয়াবা সাগর, জনি, তরুণ, সোহাগ ওরফে ডুবার, বাবলু, তাপস প্রমুখ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই এরা পালিয়ে গেলেও, বর্তমানে আবারও এলাকায় ফিরে এসে প্রকাশ্যে অস্ত্র ও মাদকের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
শহরের খড়কি এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী ডিকু, ভুট্টো, হাফিজুর, হাফেজ, মুস্তাক আত্মগোপন করেছিলো। এদের মধ্যে হাফিজুর অবৈধ অস্ত্র অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। অন্যরা মাদকের ব্যবসা এবং চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী এলাকায় ফিরে এসে প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছে, কিন্তু পুলিশ তাদের আটকের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এছাড়াও শহরের শংকরপুর, বেজপাড়া, ঘোপ, ষষ্ঠীতলা, রেলগেট, বারান্দীপাড়া, নীলগঞ্জ, বকচরসহ বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের আশ্রিত সন্ত্রাসীরাও আবারও এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে এবং গোপনে নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পদধারী নেতাদের অনুসারী এসব চিহ্নিত অপরাধীকে আটকের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. আবুল হাসনাত খান জানান, তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছেন এবং তাদের