বাংলাদেশে দুর্নীতির গভীরতা কতটা মানবজীবনের সঙ্গে মিশে গেছে—তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ রিপোর্টের প্রয়োজন হয় না। চাকরি খুঁজতে বের হওয়া নতুন গ্র্যাজুয়েট থেকে শুরু করে একটি সাধারণ কৃষকের সরকারি সেবা নিতে দোদুল্যমান অবস্থা—সবখানেই একই চিত্র।
সরকারি দপ্তরে একটি সেবার জন্য মাসের পর মাস দৌড়ঝাঁপ, হাসপাতালে রোগী ভর্তি বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে হয়রানি, আর ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা—সবকিছু মিলেই দেশের সেবাখাতগুলোতে গভীর অচলাবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
দুর্নীতি শুধু প্রশাসনেই সীমাবদ্ধ নয়; এর অর্থনৈতিক প্রভাবও স্পষ্ট। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতিকেই দায়ী করছেন। শিক্ষাব্যবস্থায় মানের অবনতি, সড়কে অরক্ষিত পরিবেশ—সবকিছুর পেছনে একই সমস্যা জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে।
দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস সরকারকে পুনরায় মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হতে থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেকসই সংস্কারের জন্য প্রশাসনকে আধুনিকায়ন, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছ নীতি, কঠোর আর্থিক আইন, কার্যকর অডিট এবং স্বাধীন নজরদারি ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে।
অ্যান্টি-করাপশন কমিশনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা হলেও সেগুলোতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার বলছে—স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত না হলে এসব প্রতিষ্ঠান কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারবে না।
বাংলাদেশের লাখো মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রাম ইঙ্গিত দিচ্ছে—দুর্নীতি এখন আর কেবল একটি প্রশাসনিক সমস্যা নয়; তা দেশের অগ্রগতিকে পঙ্গু করার এক প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।