1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পলাশবাড়ীতে কেন্দ্র ভিত্তিক নির্বাচনী সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে জেলা পুলিশের অভিযানে ইজিবাইক চোর আটক রাজারহাটের আলোচিত আনিছুর অপহরন মামলায় অন্যতম আসামী গ্রেফতার কালিয়াকৈরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবিতে দুই বোনের মৃত্যু, কটিয়াদীতে শোকের মাতম সবুজ পৃথিবী গড়তে কটিয়াদীতে ১১০০ শিক্ষার্থীকে গাছের চারা উপহার জুলাইয়ের শহীদ দিবসে বি এম কলেজে স্মরন সভা ও দোয়া মোনাজাত নভেম্বরে হাইল হাওর দখলমুক্ত করার অভিযানে নামবে জনতা: সংবাদ সম্মেলনে হাওর রক্ষা নেতৃবৃন্দের ঘোষণা ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যের ডাক : যশোরে জুলাই শহীদ দিবসের স্মরণসভায় অমিত এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় কিশোরগঞ্জে সড়ক অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ

নভেম্বরে হাইল হাওর দখলমুক্ত করার অভিযানে নামবে জনতা: সংবাদ সম্মেলনে হাওর রক্ষা নেতৃবৃন্দের ঘোষণা

দেওয়ান মাসুকুর রহমান
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে
মৌলভীবাজার, ১৬ জুলাই ২০২৫ : “মাছে-ভাতে বাঙালী। মাছ-ভাতের চাহিদা পূরণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রা রক্ষার আন্দোলনে সামিল হোন।” – এই শ্লোগানকে সামনে রেখে হাওর রক্ষায় ১১ দফা দাবীতে মৌলভীবাজারে সংবাদ সম্মেলন করেছে হাওর রক্ষা আন্দোলন। সরকারের প্রয়োগকারী সংস্থা না করলে নভেম্বর মাসে হাইল হাওর দখলমুক্ত করার অভিযানে জনতা নামবে বলে ঘোষণা দিয়েছে হাওর রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (১৬ জুলাই ২০২৫) সকাল সাড়ে ১১টায় সংগঠনের জেলা আহবায়ক কমিটির উদ্যোগে মৌলভীবাজার শহরের মামার বাড়ি রেস্টুরেন্টে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন হাওর রক্ষা আন্দোলন জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব এম. খছরু চৌধুরী।
সংগঠনের আহবায়ক আ স ম ছালেহ সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন ও ক্যাব এর সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মো. মহসিন।
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন হাওর রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মৌলভীবাজার জেলার হাওর-পরিবেশ রক্ষায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম জারি রেখেছি। এক্ষেত্রে হাওর পাড়ের জনগণ ও আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন আমাদেরকে নিরন্তর অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে হাওর রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এম. খছরু চৌধুরী বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় ছোট-বড় ৩০টি হাওর থাকলেও সরকার তথা হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের হিসেবে রয়েছে ৩টি। জেলার পরিবেশ ভারসাম্য সুরক্ষায় ‘প্রকৃতির কিডনি’ স্বরূপ ভূমিকা পালনকারী এসব হাওরের আওতাধীন খাল-বিল- নদী-ছড়া, খাস জমি দখল হয়ে হাওরের পরিধি দিনে দিনে ছোট হয়ে আসছে। দখল, দূষণ আর আইন-বিধি পরিপন্থী কার্যক্রমে পরিবেশের ভারসাম্য আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
সরকারি তথ্যমতে, এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির রিজার্ভার হাকালুকি হাওর্গের আয়তন ১৮১১৪ হেক্টর, কাউয়াদিঘী হাওরের আয়তন ১৫১৫৮ হেক্টর এবং হাইল হাওরের আয়তন ১৫১৩৮ হেক্টর। ২৩০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ, ব্যুরো ধানের উৎপাদন ভান্ডার আর নানা জাতের জলজ উদ্ভিদের সমারোহ এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ তিনটি হাওর একদিকে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তায় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরস্তর অবদান রাখছে; অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর, আরামদায়ক ও বসবাসউপযোগী আবহাওয়া ও জলবায়ুর স্থিতিশীল বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে হাওর বিষয়ক জরুরি কিছু তথ্য উপস্থাপন করে খছরু চৌধুরী জানান, “হাওর পাড়ের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও হাওরের অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারের নিমিত্তে সরকার ‘হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর’ দ্বারা ২০ বছর মেয়াদের নবায়নযোগ্য একটি ‘মাস্টার প্ল্যান’ অনুযায়ী কাজ করছে। হাওরগুলোর সীমানা নির্ধারণের কাজ মাস্টার প্ল্যানের-ই অংশ। এছাড়াও হাওরের ‘হাওর-পরিবেশ’ জীববৈচিত্র্য ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষাকল্পে রয়েছে অনেকগুল আইন-বিধি। উল্লেখযোগ্য হলো, “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩” “বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) ২০২১” এবং “বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩”। আমরা, দেশের নাগরিক হিসেবে স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৩ বছর ধরে বিস্মিত ও হতবাক হয়ে দেখছি, অল্পকিছু মানুষের লুটেরা উন্নয়নের স্বার্থে এসব আইন-বিধি লঙ্ঘন ও উপেক্ষা করেই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে/হচ্ছে এবং ২০২৪’র পরিবর্তিত বাংলাদেশে একই ধারা অব্যাহত আছে। কে না-জানে? কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরের মাঝ বরাবর সৃষ্ট মিঠামইনের রাস্তা বৃহত্তর সিলেটের বন্যার অন্যতম একটি কারণ বলে বিবেচিত। টারশিয়ারি যুগে সৃষ্ট পাহাড় গুলোর ভাটি অঞ্চলে হাওর-বিল-নদী-খাল ও পরিবেশ ধ্বংসকারী অদূরদর্শী উন্নয়ন পরিকল্পনা ভবিষ্যতের মানবিক বিপর্যয় অনিবার্য করবে। আইন-বিধি অমান্য করে সরকার, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখের সামনে হাইল হাওর ধ্বংসে একটি বাস্তব নমুনা আপনাদেরকে অবহিত করছি-
উল্লেখিত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের ১২ ধারায় ‘ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন’ ১৩ ধারায় ‘আবাদযোগ্য ভূমির উপরি স্তর কর্তন’ ৪ ধারায় ‘ভূমি প্রতারণা’ ৫ ধারায় ‘ভূমি জালিয়াতি’, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা সহ আরও অনেক ধারায় এর সবগুলোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ, হাইল হাওরে প্রাণ আরএফএল কোম্পানি সহ অন্যান্য অনেক ফিশারি মালিক এসকল অপরাধ সংগঠিত করার প’রেও তাদেরকে শাস্তির আওতাধীন করা হচ্ছে না। উপরন্তু, প্রাণ আরএফএল কোম্পানি উল্লেখিত হাইল হাওরে পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি ও তাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ উহ্য রেখে প্রশাসন সহ নানা মহলে বিভ্রান্তিমূলকভাবে সৌরবিদ্যুত, ফিশারিজ, পোল্ট্রি শিল্প স্থাপনের লাভজনক দিক উপস্থাপন করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। এলাকার নিরীহ কৃষকদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে।
আমরা নির্দ্বিধায় বলছি, হাইল হাওর এলাকায় জাল জালিয়াতির দলিলে দখল করা গরীব কৃষকের ভূমি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানি ফেরত দিতে হবে। দখল করা সরকারের খাস জমি দখলমুক্ত করে দিয়ে হাওরে যাতায়াত অবাধ করতে হবে।
উল্লেখিত প্রাণ কোম্পানীর হাইল হাওরের ফিশারিজের বাঁধের কারণে কোদালীছড়া দিয়ে শহরের পানি যথাসময়ে নামতে পারে না। গত মে মাসে শহরের জলাবদ্ধতাও এর অন্যতম কারণ।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিকল্প জায়গা থাকতে কাউয়াদিঘী হাওরের মাঝখানে ১১০ মেগাওয়াটস সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের অসৎ উদ্দেশ্য হলো –
(১) প্রকল্প কেন্দ্রে যোগাযোগের নামে হাওরের মাঝ বরাবর একটি সড়ক নির্মাণ,
(২) হাওরের কৃষকের কম মূল্যের জমি হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সরকারের খাস জমি দখল করে ‘হাওর-পরিবেশ ধ্বংস’ করে নানা ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপন করা। টিকাদরী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আনলিমা পাওয়ার লিঃ এবং কর্ণফুলি পাওয়ার লিঃ নামীয় প্রতিষ্ঠানদ্বয় প্রাণ আরএফএল কোম্পানির অনুস্মরণে জনসাধারণের মাঝে শিল্পায়নের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণায় তৎপর রয়েছেন।
হাওর রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারী উচ্চারণ করে পরিস্কার ভাষায় বলেন, হাওরের ভূমি খেকো কোম্পানি, সরকার প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে জানিয়ে দিচ্ছি যে, দেশের প্রচলিত আইন কানুনের বাইরে গিয়ে হাওর-পরিবেশ ধ্বংস করলে হাওর পাড়ের জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ জনবিস্ফোরণে রূপ নিবে। যে আগুণে পুড়ে যাবে ৫৩ বছরের শাসকগোষ্ঠীর সকল অব্যবস্থাপনা।
হাওর-পরিবেশ নিরাপদ রাখতে যা যা করতে হয়, তার সব করবে হাওরপাড়ের জনগণ সকল দায়দায়িত্ব বহন করবে সরকার ও প্রশাসন- এ আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার জেলা কমিটি’র ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিম্নরূপ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়-
(ক) চলমান জুলাই মাসে মৌলভীবাজার জেলায় যাদের কার্যক্রম রয়েছে, সেই সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে ‘হাওর-পরিবেশ রক্ষা’ এবং আইন-বিধির বাস্তবায়ন বিষয়ে মতবিনিময়।
(খ) আগষ্ট মাসব্যাপী হাওরপাড়ের কৃষক- মৎসজীবীদের সাথে নিয়ে হাট সভা- পথসভা-উঠান বৈঠক।
(গ) সেপ্টেম্বর মাসে হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার জেলার সকল উপজেলা কমিটি গঠন।
(ঘ) অক্টোবর হাওর-পরিবেশ রক্ষার জনমত গঠনে প্রচারপত্র বিলি এবং হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার এর জেলা সম্মেলন।
এবং (ঙ) (সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা না করলে) নভেম্বর মাসে হাইল হাওরে জনতার দখলমুক্ত অভিযান।
হাওর রক্ষা আন্দোলনের ১১ দফা দাবী বাস্তবায়নের ঘোষণা ও কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা, জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “১) হাওর এলাকার নদ-নদীগুলো জরুরী ভিত্তিতে খনন করতে হবে। ২) হাওরে বাঁধ নির্মাণে পিইসিকে আমূল সংস্কার করতে হবে। একে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। ৩) প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ৪) যারা দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে যুক্ত, তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৫) জরুরি ভিত্তিতে সমগ্র হাওড়ে শস্যবীমা চালু করতে হবে। ৬) ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কৃষক ও কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। বৈশ্বিক মহামারি করোনা পূর্বাপর দেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের খাদ্য সংস্থান করেছে এই শোষিত, বঞ্চিত, মেহনতী কৃষকরাই। প্রকৃতপক্ষে হাওর পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলে কৃষক বাঁচবে ও দেশ বাঁচবে।”
এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com