নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে যাওয়ার দুটি রাস্ত রয়েছে। ওই দুই রাস্তাই কাঁচা। একটি রাস্তা চন্দননগর ল²ীডাংগা মোড়ে এবং অপর রাস্তাটি বুধুরিয়া পাকা রাস্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দুই কিলোমিটার দূরত্বের রাস্তা দুইটি পাকাকরণ না হওয়ায় ওই গ্রামের মানুষদের জীবনে দুর্ভোগ আর দুঃখের যেন অবসান হচ্ছে না।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার মানুষের গ্রামটি উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছাতড়া বাজার থেকে উত্তর দিকে চার কিলোমিটার দূরে এবং বেনীপুর বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দেিণ অবস্থিত। শীতকালে গ্রামের রাস্তা দুটি দিয়ে কোনো রকমে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষায় পায়ে হাঁটা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। বৃষ্টিতে রাস্তা দুটির কোথাও হাঁটুকাদার কারণে গ্রামটি যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো দুর্ভোগে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। কয়েক শ বিঘা জমির ফসল আনা-নেওয়া, বাগানের শত শত মণ আম-পেয়ারা ও পুকুরের মাছ পরিবহনে  চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামবাসীকে। বর্ষায় ভ্যানচালকদের অনেকটা হাতে-পায়ে ধরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হয়।  রাস্তাটি সবচেয়ে বেশি তি বয়ে আনে জরুরী রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হলে। তবে গ্রামবাসীর এসব দুর্ভোগের কথা কর্তৃপরে কান পর্যন্ত যে পৌঁছাতে পারছে না।
সম্প্রতি সরেজমিনে রাস্তাটি দেখে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। রাস্তাটি গ্রামের পূর্বপাড়া মসজিদ মোড় থেকে ল²ীডাংগা পাকা রাস্তা পর্যন্ত এক কিলোমিটার এবং গ্রামের পশ্চিমপাড়া আনারুলের মোড় থেকে বুধুরিয়া পাকা রান্তা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার দূরত্ব। গ্রামের প্রায় ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মুসলিম। গ্রামে একটি পাড়ায় প্রায় ৫০০ জন ুদ্র নৃগোষ্ঠী মানষের বসবাস রয়েছে। গ্রামের রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় গ্রামের মানুষের জীবনে উন্নয়নের তেমন কোনো ছোঁয়া লাগেনি বলে জানান গ্রামবাসী।
চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মাইনুল ইসলাম, গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান, ফিরোজ হোসেন, সেকেন্দার আলী ও সেলিম রেজা জানান, রাস্তাটি দুদিক দিয়ে বর্ষায় ধান, সবজি, আম, পেয়ারা, পুকুরের মাছসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য পরিবহনে মণ প্রতি ২০ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হয়। অনেক সময় রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ কাদা হয়ে যায়, তখন ভ্যানওয়ালারা ভাড়ায় ফসল বাজারে নিতে চায় না। শুকনায় ভ্যান, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চললেও বর্ষায় রাস্তা দুটি দিয়ে এসব যানবাহন চলাচল দুরূহ হয়ে পড়ে।
গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ (৭০) বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে  গ্রামের রাস্তা দুটা কোনো মতোন গাড়ির চাকা চলে। তবে বর্ষায় কষ্টের শ্যাষ থাকে না। ফসল বেচার জন্য বাজারজাত ল্যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।  ভ্যানচালকদের অনেকটা হাতে-পায়ে ধরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হয়।’
সেলিম রেজা নামের  গ্রামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘পাকা রাস্তা না হওয়ায় আমাদের  গ্রামের ছেলেমেয়েরাও অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে। বর্ষাকালে পরীার দিন পড়লে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় সময়মতো পৌঁছাতে পারবে কি না। দুর্ভোগেও পড়তে হয়।’
চন্দননগর ইউপির প্যানেল  চেয়ারম্যান মোঃ মাইনুল ইসলাম বলেন, পরিষদ থেকে ‘গোবিন্দপুর গ্রামের রাস্তা দুটি পাকা করার জন্য উপজেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার তদবির করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। রাস্তা দুটির আইডি নাম্বার হয়ে আছে। শুনেছি রাস্তা দুটি এলজিইডির তালিকাভুক্ত হয়ে আছে। কিন্তু কাজ তো হয় না।’
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তা দুটি সম্পর্কে খোঁজ না নিয়ে এ মূহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। উন্নয়নের জন্য রাস্তাগুলো তালিকাভুক্ত আছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে বলা যাবে। তবে সুযোগ থাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তা দুটির উন্নয়নে পদপে নেওয়া হবে।’