পিরোজপুরের নেছারাবাদে প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় কম নাম্বার পাওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বেদম বেত্রাঘাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে সহকারী শিক্ষক মো. রাসেল মাহামুদ নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার ১০ নং বলদিয়া চামী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
রবিবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় উপজেলার বলদিয়া চামী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল মাঠে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ১০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, গত ৭ মে বুধবার নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ১০ নং বলদিয়া চামী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হয়ে ১৫ মে বৃহস্পতিবার শেষ হয়। ওই পরীক্ষার ইংরেজি ক্লাস নিতেন সহকারী শিক্ষক মো. রাসেল মাহমুদ। পরীক্ষার ফলাফলের ঘোষণার অংশ হিসেবে একাধিক শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার খাতায় আশানুরূপ রেজাল্ট না করায় চতুর্থ শ্রেণীর ও পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া সকল শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে বেদম পেটানোর অভিযোগ করেছেন অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা। এ ঘটনায় ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিষয়টি অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ওই শিক্ষকের বিচার চেয়ে সন্ধ্যার পরে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। বিক্ষোভের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই শিক্ষক অভিভাবকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেও কোন সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছে ওই সহকারী শিক্ষক মো. রাসেল মাহামুদ।
চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া তামান্না আক্তার অভিযোগ করে বলেন, স্যার বরাবরই বদমেজাজের। সব সময় ক্লাসে বেত নিয়ে আসে। আজ হঠাৎ ক্লাসে ঢুকেই ক্লাসের সবাইকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। আমাদের ক্লাসের সকল সহপাঠীরা বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে বললে ডাক্তার দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া খাদিজা আক্তারের মা জাকিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। বয়সের তুলনায় অনেক উঁচু লম্বা হয়েছে। আমরা তার গায়ে কখনো হাত দেই না। পরীক্ষা সে ফেল করেনি। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেও মেয়েটাকে গরুর মত পিটিয়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। যদি অপরাধ করে থাকে অভিভাবকদের ডেকে বিচার দেবে আমরা শাসন করবো। কিন্তু সবাই তো আর খারাপ রেজাল্ট করেনি ক্লাসের সকলকে বেদম বেত্রাঘাত করেছে। আমি ওই শিক্ষকের বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. রাসেল মাহামুদ কালবেলাকে বলেন, আমি চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ইংলিশ ক্লাস নেই। প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় তারা আশানুরূপ রেজাল্ট করেনি। অনেক কষ্ট করে তাদেরকে ইংরেজি শিক্ষা দেই। রেজাল্ট ভালো হয়নি বিধায় আমার মাথা ঠিক ছিল না। তাই ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীদের একটু লাঠি দিয়ে পিটিয়েছি। ওদেরকে একটু শাসন না করলে তারা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। তাদের মাঝে মাঝে একটু আধটু মারলে কি হয়?
স্কুলের শিশুদের গায়ে বেত্রাঘাত করা সমীচীন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়েছি। সেখানে বাচ্চাদের মারধর করার কোন বিধান নেই। সে দিক থেকে মারাটা আমার একদম ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোসা. শিরিন আক্তার বলেন, আমি চিকিৎসাজনিত কারণে ছুটিতে আছি। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বাচ্চাদের মারার কথাটি আমি শুনেছি। ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের বেদম মারা ঠিক হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বলেছি আমরা অভিভাবক সমাবেশে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। আপনারা সবাই বিক্ষোভ না করে বাড়িতে চলে যান।
নেছারাবাদ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।