দেশব্যাপি লটারীর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের পদায়নের পরে ময়মনসিংহে জেলা প্রশাসক পদে সাইফুর রহমানকে ও পুলিশ সুপার পদে মোঃ মিজানুর রহমান সদ্য যোগদান করেন। এর আগে পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
ময়মনসিংহে যোগদান করার পর সোমবার (১নভেম্বর) জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান যৌথভাবে জেলায় কর্মরত সর্বস্তরের সাংবাদিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সাথে যৌথভাবে মত বিনিময় সভার আয়োজন করেন। জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায়
উপস্থিত সাংবাদিকরা ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকগুলো নতুন ডিসি ও এসপির কাছে তুলে ধরেন। জেলার উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে তাঁদের মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ নতুন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মনোযোগ সহকারে শোনেন। এটি ছিল জেলার উন্নয়ন ও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে প্রশাসনের সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সভায় সাংবাদিকদের থেকে জেলার সকল সমস্যা অবগত হওয়ার পর নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান হক নিজের পরিচয় প্রদান করে ময়মনসিংহের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, মাদক ও সন্ত্রাস সহ বেআইনি কার্যদি বন্ধের লক্ষ্যে এবং সর্বোপরী দেশ ও জাতির স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসন কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
প্রশ্নপর্বে সাংবাদিকদের মধ্য থেকে অনেক সাংবাদিকরা ময়মনসিংহের কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম, মানবপাচার, সন্ত্রাস, দুর্ণীতি,ট্রাফিক বিভাগকে অবৈধ যান বন্ধসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ বিভাগকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলেন।
জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক মীর আকরাম উদ্দিন আহমেদ এর সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজা মোঃ গোলাম মাসুম প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন ) আব্দুল্লাহ আল মামুন , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) আশরাফুল করিম।
সভাপতির বক্তব্যে- নবাগত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ময়মনসিংহ আমার কাছে শুধুমাত্র প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, এটি মানুষের বিশ্বাস, সংগ্রাম এবং ত্যাগের প্রতীক। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদের রক্তস্মৃতির এই ময়মনসিংহে আমি একটি স্বচ্ছ, দক্ষ, মানবিক ও অংশগ্রহণমূলক প্রশাসন গড়ে তুলতে চাই।
তিনি ময়মনসিংহের সার্বিক উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন এবং বলেন সাংবাদিকরা সমাজের আয়না। উন্নয়ন ও সুশাসনের যাত্রায় আপনাদের সমর্থন, পরামর্শ ময়মনসিংহকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠবে।
জেলা প্রশাসক বলেন-সরকারের সঙ্গে নাগরিকদের সেতুবন্ধন করে সেবা নিশ্চিত করা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠাই জেলা প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য। ময়মনসিংহ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জেলা—আগের মতো ভবিষ্যতেও জেলার সবক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা ধরে রাখবে। এই অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
এসময় পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে জানান, মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত জেলা পুলিশের অভিযান চলবে। বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে মাদকচক্রের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়ে তিনি আরও বলেন, যুবসমাজকে রক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো, কমিউনিটি পুলিশিংকে শক্তিশালী করা এবং পরিবার–অভিভাবকদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে মাদক প্রতিরোধকে টেকসই করা হবে।এছাড়া তিনি জানান, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, শহরের যানজট নিরসন, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে মনিটরিং ও রাত্রিকালীন টহল জোরদার করা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন, ইভটিজিং, সাইবার অপরাধ ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ টাস্কফোর্স মাঠে থাকবে। পুলিশ সুপার বলেন, থানাকে আরও সেবামুখী করতে দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তি, হারানো কাগজপত্রের সাধারণ ডায়েরি সহজীকরণ এবং জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করা হবে। তিনি সাংবাদিকদের ‘সমাজের দর্পণ’ উল্লেখ করে আইন–শৃঙ্খলা উন্নয়ন ও সমস্যা চিহ্নিতকরণে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।