অত্যন্ত যৌক্তিক একটা আন্দোলনকে ঘিরে ঠিক কি ঘটে গেলো!দিনটা ১৬ই জুলাই, ২০২৪ইং।দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আইআইইউসিতেও ছাত্র ছাত্রীরা কোটা বিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্য সকাল ১০টার দিকে জড় হয় ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে।অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ভাবেই তারা তাদের আন্দোলনের কার্যক্রম শুরু করে রুখে দেয় সড়কপথ এবং রেল পথ।কিন্তু সময় গড়াতেই মানুষ রুপী হায়নারা সাধারণ শিক্ষার্থীও ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। একে একে অনেক ছাত্রের রক্ত ঝরায়।এরপরও তারা যখন সুযোগ পেলোনা বিশেষ একটা তাদের দৃষ্টি চলে গেলো ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে।
এটাই সেই ক্যাম্পাস যেখানে আমাদের পুরুষ শিক্ষকরা ছাড়া কেউই প্রবেশ করতে পারেনা।হ্যাঁ এটাই ঠিক, কোনো ছাত্র ও না।সেই সুরক্ষিত ক্যাম্পাসে তারা ছল চাতুরী বা পা চাটা লোকদের আশ্রয় নিয়ে প্রবেশ করে এবং ছাত্রীদের ধাওয়া করে।মুহুর্তে হাজার হাজার ছাত্রী যারা কিনা রাজনীতির সাথে জড়িত না তাদের ওপর লাঠি ছোঁড়া নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে।কোনো ক্যান্টিনের মালিক,দোকানদার ঢুকতে দেয়নি তাদের গায়ে আঘাত আসবে বলে,তাদের জিনিস নষ্ট হবে বলে।পুরো গায়ের ওপর চলে এসেছিলো তারা।চারিদিকে হাউমাউ কান্নার আওয়াজ।আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আমাদের শিক্ষিকা এবং শিক্ষকদের সহায়তায় তারা কোনো রকমে এই ভয়াবহ আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়ে যার যার ডিপার্ট্মেন্টের বিল্ডিং গুলোতে ঢুকে আত্মরক্ষা করে।এরপর আবার সেই পাচাটা চাটুকারদের সহায়তায় হায়নারা কিছুক্ষণের জন্য পালিয়ে যায় বিভিন্ন স্থানে।পরিস্থিতি একটু সিথিল করে পরিবহন বিভাগ এবং শিক্ষকদের সহায়তায় বাস গুলো তাদের গন্তব্যস্থলে রওনা হয় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের নিয়ে।কিন্তু হায়!আমাদের আত্মরক্ষা ঠিক হয়ে উঠলো না।জীবন বাজি রেখে আমরা রাস্তায় বের হলাম যার যার পরিবারে ফিরে যেতে।
ঠিক যে ছেলে মেয়েগুলো জানলার পাশের সিট নিয়ে টানাটানি করে তারা সবাই তাদের পরিচিত কাউকে জানলার পাশে বসতে দিতে রাজিনা।সবাই গাড়ি ছাড়ার আগে নিজেদের পরিচিত সবাইকে কল দিয়ে সিউর হচ্ছে ঠিক আছে কিনা,গাড়িতে উঠছে কিনা এবং গাড়ির সব গুলো গ্লাস যেনো অফ রাখে।সবাই মনে মনে আতঙ্কে আছে যেকোনো মুহূর্তে হামলা হবে,যেকোনো মুহূর্তে যা কিছুই হতে পারে।আতঙ্কের মধ্যদিয়ে শুরু হলো আইআইইউসির বাস যাত্রা। কিন্তু হায়নারা যে ওত পেতে আছে আর তাদের চামচিকারাও যে খবর পৌঁছে দিচ্ছে।কিছু বাস ঠিক মতো পৌঁছাতে পারলেও সবাই পারেনি সুস্থ ভাবে বাসায় ফিরতে।বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বাসে অতর্কিত হামলা করে।বাসের গ্লাস ভেঙ্গে, বাসের বিভিন্ন পার্টস ভেঙ্গে, শিক্ষার্থীদের লাঠি,ছোঁটা,চাকু ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।তারা বাস থেকে বেরিয়ে নিজেদের আত্মরক্ষার করতে চাইলে যে যেখানে যাকে পেয়েছে আঘাত করেছে।রক্ত ঝরিয়েছে আমাদের ভাইদের, রক্ত ঝরিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
বাস ড্রাইভার গুলো ও কি বাদ পড়েছে?না পড়েনি।তাদেরও অমানবিক ভাবে মেরেছে হায়নার দল।তারাও বুঝি খুব অপরাধী ছিলো?এই হায়নার দল গুলোকে জিজ্ঞেস করতে খুব ইচ্ছে করে তোর পরিবারে কি কোনো মা বাবা বোন নেই?কিভাবে পারলি?তারচেয়েও বেশি ইচ্ছে করছে এই কুলাঙ্গারদের মা বাবাকে ধরে জিজ্ঞেস করতে এ কেমন শিক্ষা? এ কেমন সন্তান? তাদের সাথেও কি ঠিক একই ব্যবহার করে কিনা তাদের এই কুলাঙ্গার সন্তান গুলো।মুহূর্তেই কিভাবে ওরা আমাদের ক্যাম্পাস,ছাত্র ছাত্রীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো,তাদের রক্ত ঝরালো,বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করলো!হায় তাদের কাছে রক্তের কোনো দাম নেই?ছি কুলাঙ্গার ছি!তোদের জন্মদাতা পিতা মাতা এবং পরিবারকে ছি!তোদের নূন্যতম শিক্ষাটুকুন দিতে পারেনি।আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী।
আমাদের নামের পাশে নেই কোনো ট্যাগ, নেই কোনো লীগ।আমরা শুধু মাত্র শিক্ষার্থী। আমাদের চাওয়াটা যৌক্তিক একটা দাবী।এর বাইরে আমরা কোনো নোংরা রাজনীতির অংশনা।ধিক্কার জানাই তোদের যারা আমাদের শতশত শিক্ষার্থীর ওপর এভাবে ঝাপিয়ে পড়েছিস,রক্ত ঝরিয়েছিস।মুহূর্তেই বদলে দিয়েছিস সবার জীবনের পরিস্থিতি, বদলে দিয়েছিস সবার চিন্তা ধারা।ছি তোদের ছি!এটাতো শুধু মাত্র কয়েকটা ঘন্টার একটু খানি বর্ণনা। দেশ জুড়ে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে এভাবে হায়নারা তান্ডব চালাচ্ছে। কেড়ে নিয়েছে আমাদের ভাইদের প্রাণ। এই রক্তের প্রতিদান,এই জীবনের প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা দিবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না।রক্তের প্রতিদান যদি আল্লাহ না-ই দিতো ৫২ থেকে ৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আসতো না।সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন কতটা গুরুতর সেটা যেমন ৫২তে বুঝা গিয়েছে তেমনি ২০২৪ এ এসেও আমাদের ভাইয়ের বুক পেতে নেওয়া বুলেটের প্রতিটা কণা বুঝিয়ে দিবে।