আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম ডালিম ভোল পাল্টে এখন বিএনপি হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদের ছত্রছায়ায় থাকা এ ইউপি সদস্য এখন বিএনপি নেতা হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ছবিও ব্যবহার করে জানাচ্ছেন ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা। যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের মাঝে। বিষয়টি নজরে এসেছে সদর উপজেলা বিএনপিরও। ইতিমধ্যে সোমবার ওই ডালিম বিএনপির কেউ নয়, এমনকি কোনো অঙ্গসংগঠনের সাথেও তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন তারা।
ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, ছোটবেলা থেকেই ডালিম ডানপিটে। কাঠের ব্যবসাসহ নানা ব্যবসা রয়েছে তার। এছাড়া এলাকায় তৈরি করেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদের অনুসারী হওয়ায় বাগিয়েছেন বাড়তি সুবিধা। গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মীর আরশাদ আলী রহমানের সাথে আতাত করেন। মোটা অঙ্কের টাকা দেন আরশাদসহ দলীয় নেতাদের। আরবপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী হন। নৌকার প্রার্থী হিসেবে নিজেকে দাবি করে প্রচারণা চালান। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। কয়েক মাসের মাথায় চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর তিনি নিজেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। এছাড়া বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রামে তিনি ছিলেন সরব। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সাথে ছবি তুলে পোস্ট দিতেন অহরহ। বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, ডালিম ছিলেন বিএনপির জন্য আতঙ্কের নাম। তিনি ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীদের লিস্ট তৈরি করে দিতেন প্রশাসন ও আওয়ামী লীগারদের হাতে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনিও কয়েকদিন গা ঢাকা দেন। কয়েকদিন পর ফের প্রকাশ্যে এসে এখন বিএনপি নেতা সাজছেন। শুধুই তাই নয়, তিনি ইতিমধ্যে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নানা ধরনের অপকর্মে জড়িত হয়েছেন। ঈদুল আজহায় দলের নেতাদের ছবি ব্যবহার করে ঈদ শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন। বিষয়টি কেউই মেনে নিতে পারছেন না। এ বিষয়ে তারা সদর উপজেলা বিএনপির কাছে অভিযোগও দিয়েছেন। একই সাথে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি তাদের নজরে আসায় সোমবার তারা ডালিম মেম্বার সম্পর্কে সদর উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছেন, ফেসবুকে নেতাদের ছবি দিয়ে তার এমন কর্মকাণ্ডে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। জাহিদ কখনোই বিএনপি কিংবা তার অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। বরং তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তার বিএনপিতে যোগদানের কোনো সুযোগ নেই। ফ্যাসিবাদী দোসররা অতীত অপকর্ম আড়াল করতে যাতে না পারে সেক্ষেত্রে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে ডালিমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনে আইনি সহায়তাও নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম ডালিম গণমাধ্যমের সামনে বলেছেন, তার বাবা বিএনপির রাজনীতি করতেন। সেই সুবাদে ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করেছেন। পরে যুবদলের রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে এজন্য তার উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি বিএনপি নেতাদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে পাননি। বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়েছে তার। তিনি যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের বিপদের দিনে নিজ বাড়িতে এনে আশ্রয় দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে বলেন, আমার নামে একটিই মামলা রয়েছে যা আওয়ামী লীগ নেতা শাহারুল ইসলামকে মারপিটের মামলা, এছাড়া কোনো মামলা নেই। নেতাদের ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা বার্তার বিষয়ে বলেন, সেটিও তার করা না। তার ফেসবুকেও পোস্ট হয়নি। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা নিজেরা শুভেচ্ছা বার্তা বানিয়ে প্রচার করছেন। তার সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন।