রাজশাহী নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় এক বৃদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সকালে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার মুঞ্জু হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় রোগীর স্বজনেরা। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন কর্তব্যরত নার্স, রিসিপসনিস্ট সহ কর্তাব্যক্তিরা। অক্সিজেন স্বল্পতা, লোকবল সংকট ও তাৎক্ষণিক ক্রাইসিস রেসপন্স বা ইমারজেন্সি সেবা না পাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। মৃত বৃদ্ধার নাম বেনু বেগম (৭০)। তিনি নগরীর বোয়ালিয়া থানার সুজানগর মিতালী ক্লাব এলাকার মৃত বশির আহম্মেদের স্ত্রী। রোগীর স্বজনরা জানায়, কোমরের (হাড়ভাঙ্গা) সমস্যা নিয়ে গত ৬ এপ্রিল হাসপাতালটিতে ভর্তি হন রেনু বেগম। গত মঙ্গলবার অর্থোপেডিক অপারেশন করেন ডা. হাবিবুল হাসান। কিন্তু অপারেশন পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা তাকে কোনো পর্যবেক্ষণ কক্ষে না রেখে সরাসরি ওয়ার্ডে দেওয়া হয়। বুধবার সকাল ৮টার দিকে বেনু বেগমের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এসময় তাকে অক্সিজেন দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক বা নার্স ছিল না। অনেক চিৎকার করেও রোগীর স্বজনেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে পায়নি। একসময় ছটফট করতে করতে রোগী বেনু বেগম মারা যান। এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় রোগীর স্বজনেরা। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন কর্তব্যরত নার্স, রিসিপসনিস্ট ও কর্মকতা-কর্মচারী। পরে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতালটির এফসিপিএস সার্জন ডা. এসআই. রবিন রোগীর স্বজনদের কাছে নিজেদের ভুল শিকার করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১৬নং ওর্য়াডের সাবেক কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ ও ৩নং ওর্য়াড বিএনপি নেতা নাজির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে সমঝোতা করে দেন। মৃত বেনু বেগমের ছেলে সনি সাংবাদিকদের বলেন, রবিবার তার মাকে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ওটি করা হয়েছে। ওটির পর পেসেন্ট সুস্থ স্বাভাবিক ছিলো। তবে বুধবার একটু শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হচ্ছিল। এজন্য হাসপাতালের লোকজনকে অক্সিজেন আনতে বলা হলেও ২০-২৫ মিনিট পর হয়ে গেলেও তারা কেউ অক্সিজেন আনে না। ডাক্তারকে ফোন দেওয়া হলেও ডাক্তার ফোন ধরে না। রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজন মমতাজ পারভীন জানান, অপারেশনের পর সকালে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। কিন্তু, হাসপাতালটিতে এসময় কোনো ডাক্তার বা নার্স কেউই ছিলেন না। এর কিছুক্ষণ পর রোগী ছটপট করে এখানেই মারা যায়। এ বিষয়ে রাসিকের সাবেক ওর্য়াড কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ বলেন, আমি হাসপাতালটিতে এসে দেখলাম হাসপাতালটি এখনো পূর্ণাঙ্গ সেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুত নয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার কারণে রোগীটি মৃত্যুবরণ করেন। এই সমস্যার জন্য অক্সিজেন দেওয়ার মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি। বারবার বলার পরেও একজন আরেকজনের কাছে পাঠিয়ে সময় ক্ষেপণ করেছে। সময় মতো সেবা না পাওয়ার কারণে রোগী মারা যায়। রাজশাহী জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবা খাতুন বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। রোগীর স্বজনেরা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক একটি টিম পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনি। তবে, রোগীর স্বজনেরা এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।