রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) সংসদীয় আসনটি পুঠিয়া ও দুর্গাপুর নামক দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ইতিপূর্বে সাধারণত এই আসনটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ জাতীয় সাংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এসেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০০৮ সালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল, আবু বক্কর সিদ্দিক এবং মরহুম অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা ও তার সহধর্মিণী নুরুন নাহার পারুল নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। সে নির্বাচনে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল বিএনপির সাংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এরপর, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সাংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন মাত্র দুজন, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল এবং অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা। সেই নির্বাচনে খেলাপী ঋণের কারণে অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন দেওয়া হলো অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডলকে। উল্লেখ্য যে, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন।
তবে, এবার লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এই আসনে শুধুমাত্র বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা অত্যাধিক বেশি। মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় যে, এবার আওয়ামীলীগের জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায়, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) আসনটিতে জাতীয় সাংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্তত আট জন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা বিভিন্ন গণসংযোগে তৎপর রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় পরিচিত ও অপরিচিত মুখ। তারা হলেন ১.পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনে গত ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে পরপর দুই দুইবারের বিএনপির মনোনীত সাংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল, ২.কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক, ৩.বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী মাহমুদা হাবিবা, ৪.বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, ৫.বাংলাদেশ ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ৬.রাজশাহী জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রোকনুজ্জামান আলম, ৭.পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি খায়রুল হক শিমুল, এবং ৮.রাজশাহী-৫(পুঠিয়া-দূর্গাপুর) আসনে দুইবারের নির্বাচিত সাংসদ সদস্য মরহুম অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফার সন্তান জুলফার নাঈম মোস্তফা বিষ্ময়।
এমতাবস্থায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই, রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব একের পর এক কারণ দর্শানোর নোটিশ ও বহিষ্কার নোটিশ প্রদান করে যাচ্ছেন বিএনপির শেকড় খ্যাত সব প্রবীণ নেতাদের। নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ না করে নিজের ব্যাক্তিগত ক্ষমতাবলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন ব্যাতিত জেলা আহ্বায়ক কমিটির এ ধরনের বহিষ্কার করার ক্ষমতা আছে কিনা এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য যে, পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি ইউনিয়নের হাতিনাদা এলাকায়, বানেশ্বর ইউনিয়নের বিএনপি নেতা রফিকের ব্যাক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে এক সেনাবাহিনীর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই সকল বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান শুরু হয়। সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, এলাকার এক চায়ের দোকানে বিএনপি নেতা রফিকের সাথে সেনা সদস্যের ভাইয়ের চোখের ইশারায় রেসারেসি আদান-প্রদানের জের ধরে রফিক এই ভাংচুর ও অগ্নিকান্ড ঘটায়। কিন্তু পরবর্তীতে এক অজানা কারণে রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার বিএনপির নেতা রফিক সহ বিএনপির অন্য এক প্রবীণ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ব্যাতিত সরাসরি আজীবনের জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে নোটিশ জারি করেন। যখন বহিষ্কার নোটিশ জারি করেন তখন আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মা পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নে পূর্বঘোষিত বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচিতে অবস্থান করছিলেন। তাই পরবর্তীতে সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত বিএনপির প্রবীণ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ২০০৮ ও ২০১৮ সালের বিএনপি মনোনীত সাংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। এছাড়াও একই সুত্রে পুঠিয়া পৌর বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল মন্ডলকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন রাজশাহী বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার।
বর্তমানে এ নিয়ে পুঠিয়া-দূর্গাপুরের নেতা-কর্মী-সমর্থক সহ বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির তৃনমুল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দাবি যে, রাজশাহী বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব তাদের বিশেষ উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ও দলীয় গঠনতন্ত্র অমান্য করে পুঠিয়া-দূর্গাপুরের বিএনপির শেকড় উপড়ানোর কাজে ব্যাস্ত রয়েছেন যা এই আসনের বিএনপির জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। এছাড়াও তারা এ বিষয়টিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দলীয় বিশৃঙ্খলা নিরসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট আকুল আবেদন জানায়।