সিরাজগঞ্জ শহরের দরগা রোডে সরকারি বিধি ও পৌর আইনের তোয়াক্কা না করে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক, বহুতল, বিলাসবহুল ভবন। অভিযোগ উঠেছে—এ নির্মাণকাজে জড়িত রয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ের স্টেনোটাইপিস্ট খাদেমুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক হেদায়েত উল্লাহসহ একাধিক প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভবনটির জন্য সিরাজগঞ্জ পৌরসভা সর্বোচ্চ ৬ তলার অনুমোদন দিলেও তা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ৮ তলা পর্যন্ত নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। যা স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী সম্পূর্ণ বেআইনি। নির্মাণকাজে আইন ভঙ্গের পাশাপাশি ঢাকা ফায়ার সার্ভিসে ঘুষ প্রদানের অভিযোগ ও ভবন মালিকের স্বীকারোক্তি রয়েছে, বলে জানা গেছে। সরকারি চাকরিতে কর্মরত ব্যক্তি হিসেবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এমন ভবন নির্মাণের সক্ষমতা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র সন্দেহ ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ অর্থের উৎসে রয়েছে অবৈধ লেনদেন ও দীর্ঘদিনের দুর্নীতির জাল। এ বিষয়ে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪, এবং সাম্প্রতিক সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী, এ ধরনের গুরুতর অসদাচরণ ও দুর্নীতি প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের চাকরিচ্যুতি, বাধ্যতামূলক অবসর কিংবা ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হতে পারে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ জনসাধারণ বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রশাসনিক পর্যায়েও গড়িয়েছে। ০৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সিরাজগঞ্জ পৌর প্রশাসকের কাছে ২৪ জুন ২০২৫ তারিখে সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকাতেও একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। পরবর্তীতে, ৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে সিরাজগঞ্জ পৌর মেয়র ভবনের মালিকদের ৮ তলা অংশ সাত কর্মদিবসের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য—সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়নি, বরং ভবনটি পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, এ ধরনের বেআইনি নির্মাণ শুধু আইনের অপমান নয়, বরং একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে—কিভাবে প্রভাব খাটিয়ে, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন। তা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।