বরগুনার কলেজ রোডে স্ত্রীকে নিজ হাতে কুপিয়ে হত্যা করে থানা এসে আত্মসমর্পণ করেন স্বামী আবুল কালাম (৩৫)। পারিবারিক কোন্দলে প্রায় সংসারে জামেলা লেগে থাকতো। তার অবসান ঘটলো আসমা আক্তার পুতুলের মৃত্যুর মাধ্যমে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে বরগুনা পৌরসভার সরকারি কলেজের মহিলা হোস্টেল সংলগ্ন বাগান বাড়ি নামক এলাকার একটি ভাড়া বাসায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহত আসমা আক্তার পুতুল ৬নং কাজিরাবাদ ইউনিয়ন বকুলতলী গ্রামের মৃত মোঃ ইউনুস হাওলাদারের মেয়ে। ২০১৩ সালে পূর্বালী ব্যাংকে পরিছন্নতা কর্মী পদে চাকরী করে। ২০০৮ সালে ইসলামী শরিয়াত মোতাবেক বিবাহ হয়। দাম্পত্য জীবেন তাহাদের ০২টি সন্তান আছে। মোসাঃ রাকা মনি(১৩) ও মোঃ রাফি(৪)। স্থানীয়দের তথ্য অনুসারে পারিবারিক জামেলার জন্য প্রায় সংসারে মারামারির ঘটনা ঘটতো। স্ত্রীর হাতের সোনার রুলি বিক্রি করেন স্বামী। স্ত্রী হাতের সোনার রুলি ফেরত চাইলে প্রায় সংসারে মারামারি ঘটতো এবং স্ত্রীকে ব্যাংকের চাকরি পাইয়ে দিতে তিনি টাকা পয়সা খরচ করেন। তবে পূর্বালী ব্যাংকে চাকরি হলে বেতনের টাকা স্বামীকে দিতে রাজি হয়নি স্ত্রী আসমা। এসব নানা বিষয় নিয়ে কালামের সঙ্গে আসমা আক্তারের প্রায় সময়ই মনোমালিন্য হত। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরগুনা পৌরসভার শহিদ স্মৃতি সড়ক বরিয়ালপাড়া নামক এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম আকনের ছেলে মোঃ আবুল কালাম আকন বরগুনায় শহিদ স্মৃতি নামে একটি এনজিও আছে। আসামীর উক্ত এনজিও ব্যবসা করে। পৌরসভার সরকারি কলেজের মহিলা হোস্টেল সংলগ্ন বাগান বাড়ি নামক এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। কালামের বাড়ির মালিক মোঃ রাসেল বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে কালাম তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে আমার বাসায় ভাড়া থাকতেন। তবে আমি তাদের মধ্যে কোনো ধরণের পারিবারিক কলহ দেখতে পাইনি। এমনকি প্রতিবেশী যারা আছে তারাও দেখেনি। রাতে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে বাসায় এসে দেখি আসমা আক্তারকে মেরে আহত করে ঘর থেকে কালাম চলে গেছে। আসমার খালাতো ভাই আল-আমীন বলেন, প্রায় শুনতাম পারিবারিক কোন্দল। খবর শুনে বাড়ি থেকে ছুটে আসি আসি,আসার পর দেখি মাটিতে নিথর দেহ পড়ে আছে। পরবর্তীতে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। আমার বোনের হত্যার বিচার চাই। আসমার মেয়ে রাকা মনি বলেন, বাবা আমাকে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে ঘুম পরিয়ে দেয়। লোকজন এসে আমাকে উঠায়। উঠে দেখি আমার মায়ের দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। এলাকার লোকজন হাসপাতাল নিয়ে আসে। এ বিষয় বরগুনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, আবুল কালাম নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ফ্লোরে পড়ে থাকা আহত অবস্থায় আসমা আক্তারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে। এছাড়াও আবুল কালামকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানতে আবুল কালামকে জিজ্ঞেসাবাদ ও তদন্ত চলমান রয়েছে। বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, স্ত্রীর চাকরির বেতন না দেয়ায় এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে ঘাতক স্বামী আবুল কালাম বর্তমানে ট্রমাটাইজ অবস্থায় থাকায় এই মুহূর্তে বেশি কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছেনা।