ইংলিশ মিডফিল্ডার কোল পালমারের প্রতিভা নিয়ে কখনোই সন্দেহ ছিল না। কিন্তু গত মৌসুমে অজানা কারণে ম্যানচেস্টার সিটির জার্সিতে আলো ছড়াতে পারছিলেন না পালমার। পেপ গার্দিওলার অধীনে প্রিমিয়ার লিগে ১৪ ম্যাচ খেলেও গোলহীন থাকেন তিনি। অবশ্য প্লেয়িং টাইম যে ঠিকঠাক পেয়েছিলেন, এমনটাও বলা যাবে না। গত মৌসুমে সিটির জার্সিতে সব মিলে ২৫ ম্যাচ খেলে মাত্র ৭টিতে শুরুর একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন।
বেশি সময় মাঠে থাকতে মৌসুম শেষ হতেই ৪ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডের বিনিময়ে সিটি ছেড়ে চেলসিতে পাড়ি জমান পালমার। ব্যস, একটা দলবদলেই পাল্টে যায় ২১ বছর বয়সী এ প্লেমেকারের জীবন। আগের মৌসুমে প্রতিপক্ষের জাল ভুলে যাওয়া পালমার চেলসির জার্সিতে গোলের পর গোল করে চলছেন। সর্বশেষ গতকাল এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচের পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছে আগের সবকিছুকেই।
ঘরের মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এভারটনকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে চেলসি। এরমধ্যে একাই চার গোল করেছেন পালমার। গোল উৎসবের ম্যাচে প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার লড়াইয়ে আর্লিং হালান্ডকে ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। লিগে দুজনেরই গোল এখন সমান ২০টি করে।
গোলে হলান্ডকে ছুঁয়েছেন, এর পাশাপাশি ২৮ ম্যাচেই আরও ৯টি গোল করিয়েছেন পালমার। খেলার ধরনের কথা তো সংখ্যা বলতেই পারছে না, যে খেলার ধরনের কারণে ‘ইংলিশ মেসি’ ডাকনাম পেয়ে গিয়েছিলেন পালমার। এই মৌসুমের পারফরম্যান্সে ইংলিশ তরুণ বুঝিয়ে চলেছেন, লোকে নামটা একেবারে ভুল দেয়নি।
গতকাল ম্যাচের শুরু থেকে এভারটনকে চেপে ধরে চেলসি। একের পর এক আক্রমণের ঢেউ তোলে প্রতিপক্ষের রক্ষণে। এর ফলও পেয়ে যায় দ্রুতই। ম্যাচের ১৩ মিনিটে গোল উৎসবের সূচনা করেন পালমার। সতীর্থ নিকোলাস জ্যাকসনের সঙ্গে পাস দেওয়া নেওয়া করে বাঁ পায়ের জোরাল শটে এভারটন গোলকিপারকে পরাস্ত করেন ইংলিশ মিডফিল্ডার।
৫ মিনিট পরে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পালমার। জ্যাকসনের শট এভারটন গোলকিপার পিকফোর্ডের হাতে ফিরে এলে হেড থেকে দ্বিতীয় গোল পান তিনি। ম্যাচের ২৯ মিনিটে প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে ডান পায়ের শটে গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে এভারটনের জালে বল জড়ান পালমার।
প্রথম গোলটি বাঁ পায়ে, দ্বিতীয়টি হেডে, পরেরটি ডান পায়ে – যাকে বলে পারফেক্ট হ্যাটট্রিক। চেলসি ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ম্যাচের প্রথমার্ধেই হ্যাটট্রিক করলেন পালমার। শুধু তা-ই নয়, প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে কম সময়ে পারফেক্ট হ্যাটট্রিক করার রেকর্ডটিও এখন ইংলিশ মিডফিল্ডারের দখলে।
ম্যাচের এক তৃতীয়াংশেই তিন গোলে এগিয়ে যাওয়া চেলসি প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার আগে গোল পেয়েছে আরও একটি। ৪৪ মিনিটে স্কোরলাইন ৪-০ করেন জ্যাকসন।
বিরতি থেকে ফিরেও আক্রমণের ধার অব্যাহত রাখে চেলসি। এভারটনও পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করলেও চেলসির জমাট রক্ষণ ভাঙতে পারেনি। উল্টো ৬৪ মিনিটে আরও একটি গোল হজম করে সফরকারীরা। পেনাল্টি থেকে চেলসির পঞ্চম ও ব্যক্তিগত চতুর্থ গোলটি করেন পালমার। এ নিয়ে লিগে এ মৌসুমে নয় পেনাল্টির সবগুলোকে গোলে পরিণত করলেন পালমার।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তে এভারটনের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন অ্যালফি গিলক্রিস্ট। ৮৮ মিনিটে বদলি নেমে ২ মিনিট পরেই গোলের দেখা পান ২০ বছর বয়সী এ তরুণ রাইটব্যাক। একাডেমি থেকে উঠে আসা গিলক্রিস্টের চেলসির মূল দলের জার্সিতে এটাই প্রথম গোল।
গতকালের এমন বড় জয়ের পরেও পয়েন্ট টেবিলে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই চেলসি। ৩১ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার নয়ে পচেত্তিনোর শিষ্যরা। অন্যদিকে ৩২ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে ১৬ নম্বরে এভারটন।