1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পবিপ্রবিতে কোর্স ফর রোভার মেট ‘২৪ সম্পন্ন মিঠাপুকুরে বাঁশের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ লোহাগাড়া প্রেসক্লাব’র নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের শপথ গ্রহণ সম্পন্ন রাবির নতুন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান হিলিতে ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মীসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে কর্মসূচীর নামে মানহানীর চেষ্টা, সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় দৌলতখানে ফসলের মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন ধানের শীষ, স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে কৃষকেরা চিরিরবন্দরে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে সাক্ষীগণের সংবাদ সম্মেলন পবিপ্রবিতে গভীর রাতে র‌্যাগিং নির্যাতন, আহত ৫ শিক্ষার্থী

লক্ষ্মীপুর জেলার জন্মদিন আজ

মোঃ রেদওয়ানুল ইসলাম
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৩২৫ বার পড়া হয়েছে
লক্ষ্মীপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে লক্ষ্মীপুর নামে সর্বপ্রথম থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬০ সালে। এরপর ১৯৭৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ৫নং বাঞ্ছানগর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। পরে এই পৌরসভাটির বিস্তৃতি ঘটে। রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নিয়ে ১৯৭৯ সালের ১৯ জুলাই লক্ষ্মীপুর মহকুমা এবং ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি একই অঞ্চল নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা গঠিত হয়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২২°৩০´ থেকে ২৩°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৮´ থেকে ৯০°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে লক্ষ্মীপুর জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৫৭ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে ভোলা জেলা ও নোয়াখালী জেলা, পূর্বে নোয়াখালী জেলা, পশ্চিমে মেঘনা নদী, ভোলা জেলা ও বরিশাল জেলা। ১৩৬৭.৫৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জেলাটি মেঘনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। লক্ষ্মীপুর জেলাধীন লক্ষ্মীপুর শহরটি রহমতখালি নদীর তীরে অবস্থিত। লক্ষ্মীপুর জেলা সয়াবিন, নারিকেল এবং সুপারির জন্য বিখ্যাত।
এবার আসি লক্ষ্মীপুর জেলার ইতিহাস নিয়ে___
লক্ষ্মীপুর জেলার নামকরণ নিয়ে কয়েকটি মত প্রচলিত রয়েছে-
লক্ষ্মী, হিন্দু ধর্মানুসারে ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী (দুর্গা কন্যা ও বিষ্ণু পত্নী) এবং পুর হল শহর বা নগর। এ হিসাবে লক্ষ্মীপুর এর সাধারণ অর্থ দাঁড়ায় সম্পদ সমৃদ্ধ শহর বা সৌভাগ্যের নগরী। ঐতিহাসিক কৈলাশ চন্দ্র সিংহ রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস লিখতে গিয়ে তৎকালীন নোয়াখালীর পরগণা ও মহালগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন। এতে দেখা যায়, বাঞ্ছানগর ও সমসেরাবাদ মৌজার পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর নামে একটি মৌজা ছিল। আজকের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর মৌজাই তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজা।
আবার অন্যমতে, সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা আরাকান পলায়নের সময় ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে ঢাকা ত্যাগ করেন। তিনি ধাপা ও শ্রীপুর হয়ে ৯ মে লক্ষ্মীদাহ পরগনা ত্যাগ করে ভুলুয়া দুর্গের ৮ মাইলের মধ্যে আসেন। ১২ মে ভুলুয়া দুর্গ জয় করতে না পেরে আরাকান চলে যান। সেই লক্ষ্মীদাহ পরগনা থেকে লক্ষ্মীপুর নামকরণ করা হয়েছে বলে কেউ কেউ ধারণ করেন। লক্ষ্মীপুর শহরের পূর্ব পাশে শাহ সুজার নামানুসারে একটি সড়কের নামকরণ করা হয় সুজা বাদশা সড়ক। বিখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সানাউল্লাহ নূরী সুজা বাদশা সড়ক নামে একটি ইতিহাস গ্রন্থও রচনা করেছেন।
১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে মগ ও ফিরিঙ্গীদের মিলিত বাহিনী ভুলুয়া, ভবানীগঞ্জ ও ইসলামাবাদ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। স্যার যদুনাথ সরকার এ সংক্রান্ত বর্ণনায় লিখেছেন, ইসলামাবাদ চাটগাঁ শহর নয়। ভুলুয়ার পশ্চিমে একটি দুর্গ সমৃদ্ধ শহর। ঐতিহাসিক ড. বোরাহ ইসলামাবাদকে লক্ষ্মীপুর বলে ধারণা করেছেন। এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজার অংশ মেঘনা পাড়ের দুর্গ সমৃদ্ধ কামানখোলাই ইসলামাবাদ নামের মগ ও ফিরিঙ্গীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল।শ্রী সুরেশ চন্দ্রনাথ মুজমদার রাজপুরুষ যোগীবংশ নামক গবেষণামূলক গ্রন্থে লিখেছেন দালাল বাজারের জমিদার রাজা গৌর কিশোর রায় চৌধুরী ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে রাজা উপাধি পেয়েছেন। তার পূর্বপুরুষরা ১৬২৯ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দালাল বাজার আসেন। তার বংশের প্রথম পুরুষের নাম লক্ষ্মী নারায়ণ রায় (বৈষ্ণব) এবং রাজা গৌর কিশোরের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী প্রিয়া। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, লক্ষ্মী নারায়ণ রায় বা লক্ষ্মী প্রিয়ার নাম অনুসারে লক্ষ্মীপুরের নামকরণ করা হয়।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে লক্ষ্মীপুর ভুলুয়া রাজ্যের অধীন ছিল। মুঘল ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে লক্ষ্মীপুরে একটি সামরিক স্থাপনা ছিল। ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপন্ন হত এবং বাইরে রপ্তানি হত। লবণের কারণে এখানে লবণ বিপ্লব ঘটে। স্বদেশী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরবাসী স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করে। এ সময় মহাত্মা গান্ধী এ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তখন প্রায়ই কাফিলাতলি আখড়া ও রামগঞ্জের শ্রীরামপুর রাজবাড়ীতে অবস্থান করতেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালের জুন মাসে লক্ষ্মীপুর সফরে আসেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা ৫টি উপজেলা, ৬টি থানা, ৪টি পৌরসভা, ৫৮টি ইউনিয়ন, ৪৪৫টি মৌজা, ৫৩৬টি গ্রাম ও ৪টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এ জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের মধ্যে ৯৫.৩১% মুসলিম, ৪.৬৬% হিন্দু এবং ০.০৩% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। এ জেলার ৬২.০১% মানুষ স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন।এ জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক আ স ম আব্দুর রব, ভাষা সৈনিক কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা, অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, বীর বিক্রম আবুল খায়ের, বীর উত্তম আফতাবুল কাদের, বীর প্রতীক মোহাম্মদ লনি মিয়া দেওয়ান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী,  আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ, প্রথম বাংলাদেশী নারী এভারেষ্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং গণপরিষদের প্রথম স্পিকার মোহাম্মদ উল্লাহ, পদার্থবিজ্ঞানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আব্দুল মতিন চৌধুরী, ইতিহাসবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপ-উপাচার্য মফিজুল্যাহ কবীর, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য এ. এন. এম মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটার হাসান মাহমুদসহ প্রমুখ।
লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে রয়েছে ইসহাক জমিদার বাড়ি, কামানখোলা জমিদার বাড়ি,জ্বীনের মসজিদ, তিতা খাঁ জামে মসজিদ, দালাল বাজার জমিদার বাড়ি, মজু চৌধুরীর হাট নদীবন্দর, এশিয়ার বৃহত্তম মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শ্রীরামপুর রাজবাড়ি, আলেকজান্ডার মেঘনা বীচ, আসসালাম জামে মসজিদসহ বেশকিছু স্থান।অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, খেলাধুলা সবদিক থেকেই সমৃদ্ধ এ লক্ষ্মীপুর জেলা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন এ জেলায় যুগযুগ ধরে বিদ্যমান।
এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com