গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর দিনমজুরী দিয়ে এসএসসিতে গোল্ডেন প্লাস অর্জনকারী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্বধনিরাম গ্রামের সেই অদম্য মেধাবী মিনারজিমের পাশে দাঁড়ালেন ফুলবাড়ী ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুম।
তিনি বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) অদম্য মেধাবী মিনারজিমের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি মিনারজিমসহ তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তাদের দুঃখ কষ্টের কথা ও মিনারজিমের স্বপ্ন কি তা সম্পর্কে জানেন। পরে দুই বস্তা খাবার সামগ্রী ও পবীত্র ঈদুল আজহা পালনের জন্য নগদ কিছু টাকা অনুদান প্রদান করেন।
এ সময় ইউএনওর সাথে উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক ইউনুছ আলী আনন্দ, মডেল প্রেস ক্লাব-এর সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক নাজমুল হাসানসহ মিনারজিমের আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসী।
ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, আমি পত্রিকার নিউজে মিনারজিমের কৃতিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরে তার বাড়িতে এসেছি। এখানে এসে মিনারজিমের ও তার পরিবারের সমস্যার কথা গুলো জানতে পারলাম। এখন যেহেতু মিনারজিম কোন কলেজে ভর্তি হবে তার ফলাফল হয়নি। সে কারনে এখন কথা বলছিনা।
আজ শুধু তাকে ও তার পরিবারকে দেখার জন্য আসলাম। তবে তার কলেজে ভর্তির সময় তার সঙ্গে কথা বলবো এবং তার লেখা পড়ার জন্য সহয়োগিতার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান ইউএনও রেহেনুমা তারান্নাুম।
এদিকে মিনারজিমের ভাঙা বাড়িতে উপজেলার সর্বোচ্চ সরকারি কর্মকর্তা ইউএনও আসায় মিনারজিমের মা হালিমা বেগম ও তার প্রতিবন্ধী বাবা আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। উপজেলার বড় মাপের একজন সরকারি অফিসারকে দেখে অদম্য মেধাবী মিনারজিমও খুশি হন।
মিনারজিমের মা হালিমা বেগম বলেন, আমি কল্পনা করতে পারিনি যে, আমার ভাঙা বাড়িতে ইউএনও স্যার আসবে। উনাকে দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমি ইউএনও স্যারকে ঘরে বসতে দিতে পারিনি। আল্লাহ যেন ইউএনও স্যারের হায়াত দান করেন এই দোয়া করছি।
তিনি আরও বলেন ইউএনও স্যারের মতো এভাবে সবার সহযোগিতা পেলে আমার ছেলে মিনারজিম তার স্বপ্নপূরণ করতে পারবে। সে দেশ জাতির সেবা করতে পারবে।
মিনারজিমের বাবা মনিরুজ্জামান আমার ছেলেকে দেখতে আমার বাড়িতে ইউএনও স্যার আসায় আমরা খুবেই খুশি হয়েছি। সবার সহযোগিতা পেলে আমার ছেলে মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
অদম্য মেধাবী মিনারজিম জানান, আমি আল্লাহর রহমতে ২০২১ সালে ফুলবাড়ী ফায়ার সার্ভিস তালিমুল কোরআন মডেল বালক ও বালিকা মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হয়েছি। এরপর জেনারেল লাইনে লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ জাতির সেবা করার জন্য প্রাইভেট ও দিনমুজুরী দিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেন প্লাস পেয়েছি। আমার এই সাফল্যে ইউএনও স্যার আমার খোঁজখবর নিতে আমার বাড়িতে আসায় আমি আনন্দিত হয়েছি।
স্যার আমাকে সহযোগিতা করছেন। এভাবে আমাকে একটু গাইড করলে আমি লেখাপড়ায় সেরা হবো ও একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশ জাতির সেবা করতে পারব্
উল্লেখ যে, অদম্য মেধাবী মিনারজিম ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্বধনিরাম গ্রামের প্রতিবন্ধী মনিরুজ্জামান ও মাতা হালিমা বেগমের একমাত্র পুত্র সন্তান। পিতা-মাতার আশা ছিল মিনারজিমকে ইসলামী লাইনে লেখা পড়া করাবে।
পিতা-মাতার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মিনারজিম ছোট থেকে কোরআন শিক্ষা শুরু করে। পাশাপাশি জেনারেল লাইনে লেখা পড়া চালায়। তার অদম্য ইচ্ছায় ২০২১ সালে ফুলবাড়ী ফায়ার সার্ভিস তালিমুল কোরআন মডেল বালক ও বালিকা মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হয়। এরপর বড়ভিটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসিতে সেরা ফলাফল করার জন্য মনোনিবেশ শুরু করেন। লেখাপড়ার খরচ জোগাতে প্রাইভেট পড়ানোসহ দিনমজুরী দিতে হয় তাকে। অবশেষে নিজের কষ্টের উপার্জিত পয়সা, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের সহযোগিতায় এবার এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ গোল্ডেন প্লাস অর্জন করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ১১৫৩। অদম্য মেধাবী মিনারজিমের এই কৃতিত্ব নিয়ে ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব-এর সাংবাদিকদের কর্মরত গণমাধ্যম দৈনিক নাগরিক সংবাদ, দৈনিক যায়যায়দিন, দৈনিক জবাবদিহি সহ অনলাইন নিউজ পোর্টাল, দৈনিক দেশ বুলেটিন, দৈনিক প্রতিদিন খবর, দৈনিক তৃণমুলবানী নিউজটি প্রকাশ হলে ফুলবাড়ী উপজেলার স্বনামধন্য ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুমের নজরে আসে। পরে ইউএনও মিনারজিমের সহযোগিতায় হাত বাড়ায়।