লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জে একটি পারিবারিক ঝগড়া থামাতে গিয়ে ওহিদুজ্জামান (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ীর নামে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করেছে এক গৃহবধূ। লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে দায়েরকৃত মামলায় ওই গৃবধূর স্বামী মো. রাকিব হোসেনকে (৩০) আসামী করা হয়৷ স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক না পেয়ে ব্যবসায়ী ওহিদুজ্জামানকে দিয়ে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে গৃহবধূর ওই ঘটনাকে ‘সাজানো’ বলছে এলাকাবাসী। প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরভূতা গ্রামে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ মানববন্ধন করেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তারা প্রকৃত রহস্য বের করার দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে হোটেল কর্মচারী মো. রাকিব হোসেনের সাথে বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী কমলনগর উপজেলার মধ্য চরমার্টিন গ্রামের মো. হাছানের মেয়ে নাছিমা আক্তারের। তাদের ঘরে সাত বছরের এক মেয়ে ও সাড়ে তিন বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক কলহ ছিল তাদের মধ্যে। এ নিয়ে গৃহবধূ নাছিমার সাথে তার শাশুড়ি, ননদ ও স্বামীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো।
২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন ওই গৃহবধূ। এতে অভিযোগ আনেন, তার স্বামী রাকিব যৌতুক লোভী এবং জুয়াড়ী। জুড়া খেলে রাকিব ধারদেনা হয়ে পড়ে। সেগুলো পরিশোধ করতে স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য চাপ দিলে দাবিকৃত যৌতুক না পেয়ে ওহিদুজ্জামান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিতে ৫ সেপ্টেম্বর রাতে তার ঘরে ঢুকিয়ে দেয় রাকিব।
রাকিব ঘরের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু ঘরের ভেতের ওহিদুজ্জামান রাকিবের স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং মারধর করে নির্যাতন চালায়৷ এসময় তার দুই সন্তানকেও মারধর করেছে।
এরআগে ওই গৃহবধূ স্বামী রাকিব ও প্রতিবেশি ওহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ দিয়েছেন সদর থানায়৷
তবে স্থানীয় লোকজন গৃহবধূর করা ওই অভিযোগ পুরোপুরি সাজানো এবং ষড়যন্ত্র দাবি করে জানায়, ওইদিন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তাদের ঘরের পারিবারিকভাবে ঝামেলা হয়েছে। গৃহবধূর সাথে তার শাশুড়ি খুরশিদা বেগমের সাথে মারামারি হয়েছে। পরদিন সাকালেও তাদের মধ্যে পারিবারিকভাবে ঝগড়া হয়। এসময় তারা দুইজন আহত হয়েছে। আর পরদিন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে ব্যবসায়ী ওহিদুজ্জামান ঘটনার মিমাংসা করতে যান৷ এ জন্যই ওই গৃহবধূ তার স্বামীসহ ওহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন৷
স্থানীয়রা আরও জানায়, ঘটনার সময় তার স্বামী রাকিব বাড়িতে ছিল না। সে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে তার কর্মস্থলে ছিল। আর ওহিদুজ্জামান সামাজিক ব্যক্তি। তিনি এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না। পুরো ঘটনাটি সাজানো হয়েছে। মানববন্ধনকারীরা ঘটনাটি সরেজমিনে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত স্থানীয় দুটি মসজিদের ইমাম মো. হেলাল ও আলামিন বলেন, ওহিদুজ্জামান পারিবারিক ঝামেলা মিমাংসা করার জন্য ওই বাড়িতে গিয়েছে বলে শুনেছি। এখন তিনি ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আসামী হয়েছে। উনি এ ধরনের লোক না। মিথ্যা মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে।
ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আহছান উল্যা বলেন, রাকিবের স্ত্রী রাকিব ও ওহিদুজ্জামানকে আসামী করে প্রথমে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ওহিদুজ্জামানকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। রাকিব নিজেই থানায় যায়। পুলিশ প্রাথামিকভাবে অভিযোগগুলো তদন্ত করে সত্যতা না পেয়ে তাদের দুইজনকে ছেড়ে দেয়। পারিবারিক বিরোধটি স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য থানা থেকে জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হয়৷ কিন্তু এরপরেই রাকিরের স্ত্রী আদালতে গিয়ে একই অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগের সাথে বাস্তবতার মিল নেই বলে দাবি তার।