ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ দেশের সরকারি ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এসব প্রতিষ্ঠানে উন্নত প্রযুক্তির রেডিওথেরাপি যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবী পুরোপুরি অনুপস্থিত—মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট। আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসায় মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট (Medical Physicist) রোগীর নিরাপদ রেডিওথেরাপি নিশ্চিতে অপরিহার্য। তাঁরা রেডিয়েশন ডোজের নির্ভুল পরিকল্পনা, যন্ত্রপাতির ক্যালিব্রেশন, মান নিয়ন্ত্রণ, এবং চিকিৎসকদের কারিগরি সহায়তায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। অথচ এখনো দেশের কোনো সরকারি হাসপাতালে পূর্ণকালীন একজন মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট নিয়োগপ্রাপ্ত নন। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি ৪০০ রোগীর জন্য একজন পূর্ণকালীন মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট আবশ্যক। অথচ বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে এটি মানা হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসার নিরাপত্তা ও গুণগত মান নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বর্তমানে লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর (LINAC), IGRT, 3D-CRT-এর মতো উন্নত রেডিওথেরাপি প্রযুক্তি থাকলেও, সেগুলোর কার্যকর ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসা পদার্থবিদের অভাবে রোগীরা ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। ভুল ডোজ প্রয়োগের ফলে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং জীবনহানির আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। বিশ্বের স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান IOMP, IAEA ও AAPM মেডিক্যাল ফিজিসিস্টদের “Essential Health Professional” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অথচ বাংলাদেশে এ পেশাজীবীদের গুরুত্ব আজও স্বীকৃতি পায়নি। সীমিত পরিসরে কিছু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থাকলেও তা টেকসই ও নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যথেষ্ট নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট ছাড়া রেডিওথেরাপি পরিচালনা পাইলট ছাড়া বিমান চালানোর মতোই ভয়াবহ। এটি আন্তর্জাতিক গাইডলাইনের লঙ্ঘন এবং মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অনুচিত। চিকিৎসার গুণগত মান ও রোগী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের সরকারি ক্যান্সার হাসপাতালে পূর্ণকালীন মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট নিয়োগ এখনই প্রয়োজন।