রাজশাহী জেলার তানোরে নিখোঁজ হওয়ার ২০ দিন পর শিব নদ থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত চিত্তরঞ্জন পাল (২৬) তানোর উপজেলার হাবিবনগর পালপাড়া গ্রামের মনোরঞ্জন পালের ছেলে। বস্তার ভেতরে থাকা গলিত লাশের পরনের লুঙ্গি ও গেঞ্জি দেখে তারা লাশ শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। শনিবার সকালে উপজেলার হাবিবনগর এলাকায় কচুরিপানার ভেতরে একটি বস্তা দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহত চিত্তরঞ্জনের বাবা মনোরঞ্জন পাল বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। গ্রেফতাররা হলেন, একই গ্রামের স্বপন চন্দ্র পাল, তার স্ত্রী ছবি রানী ও কাজলী রানী পাল। মামলার অন্য তিন আসামি স্বপনের ছেলে সুবোদ পাল, মেয়ে কুমারী কামনা পাল ও জেলার মোহনপুর উপজেলার পেয়ারপুর গ্রামের মো. রাজু। এদের মধ্যে গ্রেফতার কাজলী রানী পাল আসামি কামনা পালের চাচাতো ভাবি। এজাহারে অনুযায়ী, অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে কলেজছাত্রী কামনা পালের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। উভয় পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হলে মনোরঞ্জন তার ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে স্বপন পালের বাড়ি যান। তারা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। কামনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে চিত্তরঞ্জনকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। তবুও তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলতেই থাকে। কামনা নিয়মিত চিঠিও লিখতেন। ২৬ এপ্রিল রাতের খাবার খেয়ে মনোরঞ্জনের পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাত ৪টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে মনোরঞ্জনের ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় তিনি দেখেন, চিত্তরঞ্জনের ঘরের দরজা খোলা, ভেতরে কেউ নেই। তারপর থেকে চিত্তরঞ্জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২৭ এপ্রিল থেকে কামনা ও তার ভাই সুবোদকেও এলাকায় দেখা যায়নি। চিত্তরঞ্জন ছেলের ব্যাপারে স্বপন চন্দ্র পালের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। স্বপন তাকে এলোমেলো জবাব দেন এবং ধমক দেন। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে মনোরঞ্জন তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এজাহারে বলা হয়, মামলার আসামিরা চিত্তরঞ্জনকে কৌশলে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে শিব নদে ফেলে দেন। শনিবার সকালে শিব নদে বস্তাবন্দী গলিত লাশ পাওয়া যায়। পরনের গেঞ্জি ও লুঙ্গি দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন মনোরঞ্জন। মনোরঞ্জনের অভিযোগ, কামনা পালের বাবা স্বপন পাল ও তার ছেলেরা এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। একাধিকবার তারা চিত্তরঞ্জনকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। চিত্তরঞ্জন নিখোঁজ হওয়ার পরদিনই মনোরঞ্জন পাল তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। মনোরঞ্জন জানান, কিছুদিন আগে কামনা পাল তার ছেলেকে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল যে তাকে হত্যার পরিকল্পনা চলছে। সেই চিঠি এখনো তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। তিনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রেমের সম্পর্কের জেরেই তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা দ্রুত এ হত্যার বিচার চাই। তানোর থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, প্রেমঘটিত বিরোধের কারণে চিত্তরঞ্জন পালকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তার লাশ বস্তায় ভরে শিব নদে ফেলে দেওয়া হয়। শনিবার সকালে দুর্গন্ধ ছড়ালে স্থানীয়রা কচুরিপানার ভেতরে বস্তাটি দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করেছি। ওসি জানান, ২০ দিন পানিতে থাকায় লাশের মাংস পচে কেবল হাড়গোড় অবশিষ্ট ছিল। পোশাক দেখে পরিবারের সদস্যরা লাশ শনাক্ত করেছেন। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রোববার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলার অন্য তিন আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে।