বঙ্গোপসাগর যখনই উত্তাল হয়ে ওঠে, তখনই নতুন করে আতঙ্ক নেমে আসে ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায়। এই দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখানকার মানুষের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ে। নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র প্রায়ই পর্যাপ্ত বা সহজলভ্য না থাকায়, অনেকেই বাধ্য হন নিজ ভিটেমাটিতেই ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাতে।
মনপুরাবাসীর এই বিপদের মুহূর্তে আশার আলো হয়ে উঠে দাঁড়ায় কিছু সাহসী তরুণরা। তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, মনপুরা উপজেলা টিম-এর অধীনে। এই সংগঠনের সদস্যরা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে পড়েন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে গিয়ে ঘরে ঘরে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেন, মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে উৎসাহিত করেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মনপুরা উপজেলা রেড ক্রিসেন্ট টিমের এক সদস্য জানান, “প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব মুহূর্তে আমরা তৎপর হই। সতর্ক সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষকে সচেতন করতে মাঠে নেমে পড়ি। আমরা জানি, আমাদের একটু সময়মতো পদক্ষেপ অনেক জীবন বাঁচাতে পারে।”
এই স্বেচ্ছাসেবীরা শুধু বার্তা পৌঁছে দেন না, বরং অসুস্থ, বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী মানুষদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতেও সহায়তা করেন। জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দান করেন।
স্থানীয়রা জানান, এসব স্বেচ্ছাসেবীদের সময়োপযোগী কার্যক্রম না থাকলে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও ভয়াবহ হতো। তাই শুধু প্রশাসন নয়, এই তরুণদের অবদানও সব সময় মনপুরাবাসীর জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।
দুর্যোগপ্রবণ এই দ্বীপে সচেতনতা ও প্রস্তুতির কার্যক্রমে রেড ক্রিসেন্ট মনপুরা উপজেলা টিমের ভূমিকা আজ এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। তাদের এই নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টাই মনপুরার মানুষকে নতুন করে বাঁচার আশা জোগায়।