মোংলায় যুবদল নেতা রাহাত হোসেন মুন্নার ওপর বর্বরোচিত হামলা। নেপথ্যে বেরিয়ে আসছে এমন সব তথ্য, যে কাহিনি মুভিকেও হার মানিয়েছে। এই ঘটনাটি কোনো তাৎক্ষণিক বা রাগান্বিত প্রতিক্রিয়া ছিল না। এটি সুপরিকল্পিত ভাবে সাজানো এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক প্রহসন ছিল।
তদন্তের মাধ্যমে জানা গেছে, এই হামলার ছায়া বিস্তৃত রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক জগত পর্যন্ত।
৯ জুন ঘটনাটি কিভাবে সংঘটিত হবে। তার পরিকল্পনা করা হয় কাটাখালী ঘাটসংলগ্ন বিলাসবহুল এক রিসোর্টে। গোপন বৈঠকে বসেন ছয়জন ষড়যন্ত্রকারী এর মধ্যে ১জন নারীও ছিল। বৈঠকে চট্টগ্রাম থেকে ভিডিও কলে যুক্ত হন এক প্রভাবশালী শিপিং ব্যবসায়ীর আত্মীয়। যিনি মূল পরিকল্পনার রূপকার বলে গোয়েন্দার প্রাথমিক ধারণা।
সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় মদ, নারী ও বিকৃত উল্লাসের আয়োজন। সেই নেশাগ্রস্ত পরিবেশেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। মুন্নাকে হ’ত্যার উদ্দেশ্যে হা’মলার পরিকল্পনা ।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনাটি এমনভাবে তৈরি করা হয়ে ছিল যেন মানুষ নয়। হিংস্র থাবার জন্য তৈরি করা হচ্ছে এক শিকার।
১০ জুন সকাল থেকেই মুন্নার ওপর নজরদারি শুরু হয়। তিনটি ভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তার চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করা হয়। মোবাইলের মাধ্যমে চলে সমন্বয়। প্রত্যেকের কোমরে ছিল চাপাতি ও রড। মুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতিতে ছিল তারা।
হামলার পর সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য আসে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ঘিরে। ঘটনার সময় তিনিই ছিলেন মুন্নার সঙ্গেই। এমনকি খুলনা মেডিকেলেও তাকে নিয়ে যান। অথচ তদন্তে দেখা যায়। তিনি নিজেই ষড়যন্ত্রকারীদের একজন। একে বলা হচ্ছে ইনফিলট্রেটর, যার কাজ ছিল হামলার পরে সহানুভূতির মুখোশ পরে তথ্য ধামাচাপা দেওয়া এবং চক্রকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া।
তদন্তে উঠে এসেছে রাজনৈতিক হিংসা। অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিগত শত্রুতার এক জটিল মিশেল। চট্টগ্রামের শিপিং ব্যবসায়ীকে ঘিরে পুরনো বিরোধ। রিজেশন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টানাপোড়েন এবং মোংলার একটি ৫০ বেড হাসপাতাল ঘিরে ঘটনার আগের দিন উত্তেজনা সবকিছু মিলিয়েই মুন্না হয়ে ওঠেন টার্গেট।
তদন্তে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম এলেও এখনো তা প্রকাশ করা হয়নি।
মুন্নার ওপর হামলার পর মোংলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যুবদল ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, মুন্না ছিলেন এলাকার একমাত্র কণ্ঠ। যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন। এখন তিনি খুলনা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। তার কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করার চেষ্টা ছিল
। নেতাকর্মীরা দ্রুত বিচার দাবি করেছেন । এমন রাজনীতি থামানো না গেলে ভবিষ্যতে মোংলাতে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
স্থানীয় প্রশাসন বলেন, তদন্তে সবদিক বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। তবে তদন্তকে প্রভাবমুক্ত রাখতে নিরপেক্ষ মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।