পাবনার চাটমোহরে মাজার শরীফের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের মারধরে আব্দুল আলীম সরকার (৫২) নামে এক ব্যক্তি নিহতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বাবা-ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ০১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের বড় গুয়াখড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুল আলীম সরকার বড় গুয়াখড়া গ্রামের মৃত ইছাহাক সরকারের ছেলে। তিনি মা মালেকা ইছাহাক দারুল আকরাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন।
আটককৃতরা হলো, একই গ্রামের মৃত আরজান সরদারের ছেলে আফসার আলী মাস্টার (৬৫) ও তার ছেলে টেঙ্গরজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কামরুল হাসান (খোকন মাস্টার) (৪০)।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, মা মালেকা ইছাহাক দারুল আকরাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসার অব-কাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ইসলামি জালসার আয়োজন নিয়ে বৃহস্পতিবার ০১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গ্রামে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সভা শেষে মহেলা বাজারে চা খেতে যান আব্দুল আলীম সরকার। সেখানে চা খাওয়া শেষে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে বড় গুয়াখড়া গ্রামের মাজার শরীফ গেটের সামনে পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে অভিযুক্ত আফসার আলী মাস্টার ও তার ছেলে কামরুল হাসান (খোকন মাস্টার) সহ তাদের সহযোগীরা আলীমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে খোকন মাস্টার উত্তেজিত হয়ে আলীমকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তার ওপর পড়ে যান। এ সময় অভিযুক্তরা আলীমকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। তাদের মারধরের এক পর্যায়ে আলীম সরকার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
এ সময় আশপাশের লোকজন ও আলীম সরকারের ছেলে আশিকুর রহমান আশিক ঘটনাস্থলে এগিয়ে গেলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান। পরে অজ্ঞান অবস্থায় আলীম সরকারকে উদ্ধার করে দ্রুত চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ও ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িত অভিযোগে দুইজনকে আটক করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই গোলজার হোসেন বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার ০১ ফেব্রুয়ারি রাতে আফসার আলী মাস্টার ও তার ছেলে কামরুল হাসান (খোকন মাস্টার) সহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার ০২ ফেব্রুয়ারি তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আর নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় একাধিক বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, বড় গুয়াখড়া মাজার শরীফের কমিটি গঠন নিয়ে আফসার আলী মাস্টার গ্রুপের সাথে নিহত আব্দুল আলীম সরকার গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। মাজার শরীফের গেট ভাঙার কথা বলেছিলেন খোকন মাস্টার ও তার লোকজন। এতে নিষেধ করেন আলীম সরকার। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে এ নিয়ে আফসার আলী মাস্টারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এরপরই এমন ঘটনার সুত্রপাত ঘটে।
একই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পার্শ্বডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার আলী বলেন, মাজার শরীফের কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। তারই জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে লোকমুখে শুনেছি।
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি শুনেছি এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বিধি মোতাবেক ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।