বরগুনায় গৃহবধূ সুখী হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বামী ঘটনার নির্মম বর্ণনা দিয়েছেন।
স্বামীর স্বীকারোক্তির বরাতে পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে পরিকল্পনা করে গত ২৭ জানুয়ারি নিহত গৃহবধূ সুখীর স্বামী হাসান সরদার ও শ্বশুর সাইফুল সরদার মাছ শিকারে সাগরে চলে যান। গোপনে সাগর থেকে এসে স্বামী হাসান সরদার ওই গৃহবধূকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেন। পরে তালতলী চরপাড়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের পাশে মরদেহ ফেলে রাখেন। হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে গৃহবধূর মরদেহের পরিহিত বস্ত্র অর্ধেক খুলে রাখেন।
এ ছাড়া ঘটনার দিন সুখীর মরদেহ উদ্ধারের পর স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি কান্নার অভিনয় করেন। যেন কেউ বুঝতে না পারেন, তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তালতলী থানা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী সুখীকে হত্যার কথা স্বীকার করে স্বামী হাসান সরদার এসব জানান।
এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে তালতলী থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তালতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম খান।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন ওই গৃহবধূর স্বামী হাসান সরদার, শ্বশুর সাইফুল সরদার, শাশুড়ি ময়না বেগম ও চাচাতো দেবর আব্দুল্লাহ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করলে ওই দিন বিকেলেই তাদের বরগুনা জেলহাজতে পাঠান আদালত। একই সঙ্গে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করলে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার চরপাড়া (নকরি) গ্রামের সাইদুল সরদারের ছেলে হাসান সরদারের সঙ্গে এক বছর আগে গেন্ডামারা গ্রামের বাবুল ফকিরের মেয়ে সুখী আক্তারের বিয়ে হয়।
নিহতের বাবা বাবুল ফকিরের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে গৃহবধূ সুখীর কলহ চলছিল। তুচ্ছ ঘটনায় সুখীকে নির্যাতন করতেন স্বামী ও শাশুড়ি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয়দের নিয়ে শালিস-মীমাংসাও করা হয়েছে।
গত বুধবার রাতে সুখি আক্তার নিখোঁজ হন। নিখোঁজের দুদিন পর শুক্রবার সকালে স্বামী হাসান সরদারের বাড়ির পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ঢালে মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনা শুক্রবার রাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার গৃহবধূর মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ স্বামী হাসান সরদার, শ্বশুর সাইফুল সরদার, শাশুড়ি ময়না ও চাচাতো দেবর আব্দুল্লাহকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে শুক্রবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
তালতলী থানার ওসি শহীদুল ইসলাম খাঁন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী হাসান সরদারসহ গ্রেপ্তারকৃত চারজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা হয়। আগামী মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।