আমাদের মুড, ঘুম, মোটিভেশন এবং সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন—ডোপামিন ও সেরোটোনিন। নিউরোসায়েন্স গবেষণায় দেখা গেছে, এই হরমোনের ভারসাম্য আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনের আচরণকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
ডোপামিন: পুরস্কার ও মোটিভেশনের হরমোন
ডোপামিন ব্রেইনের “রিওয়ার্ড সিস্টেম”-এর চালিকা শক্তি। যখন আমরা আনন্দদায়ক কিছু করি—যেমন প্রিয় খাবার খাওয়া, প্রশংসা পাওয়া বা লক্ষ্য অর্জন—তখন ডোপামিন নিঃসৃত হয়। এটি আমাদের মোটিভেশন ও সুখের অনুভূতি বাড়ায়।
ডোপামিনের মূল কার্যক্রম:
লক্ষ্যপূরণ ও মোটিভেশন বৃদ্ধি
আনন্দ ও তৃপ্তি অনুভব
শেখা ও অভ্যাস গঠনে সহায়তা
আসক্তির সঙ্গে সম্পর্ক (সোশ্যাল মিডিয়া, গেমিং, মাদক)
ঝুঁকি: অতিরিক্ত ডোপামিন উত্তেজনা, অস্থিরতা বা আসক্তি সৃষ্টি করতে পারে। স্কিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগে ডোপামিনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।
সেরোটোনিন: মুড ও ভারসাম্যের হরমোন
সেরোটোনিন মূলত মুড নিয়ন্ত্রণ করে এবং ঘুম, ক্ষুধা, সামাজিক আচরণ ও মানসিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত। সেরোটোনিনের ঘাটতি বিষণ্ণতা, উদ্বেগ বা আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করতে পারে।
সেরোটোনিনের মূল কার্যক্রম:
মুড স্থিতিশীল রাখা
ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ
ক্ষুধা ও হজমে সহায়তা
সামাজিক আচরণে ভারসাম্য বজায় রাখা
গবেষণার তথ্য: বিষণ্ণ রোগীদের ব্রেইনে সেরোটোনিনের মাত্রা কম থাকে। এজন্য SSRIs (Selective Serotonin Reuptake Inhibitors) ওষুধ সেরোটোনিনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
ডোপামিন ও সেরোটোনিনের সঠিক ভারসাম্য আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, আবেগ, ঘুম এবং দৈনন্দিন আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সামাজিক সংযোগ এই ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ডোপামিন ও সেরোটোনিনের গোপন রাসায়নিক ভাষা বোঝা মানে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুখের নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি পাওয়া।