আজ ২২ ফেব্রুয়ারি ব্যাডেন পাওয়েল (বিপি) দিবস। আজকের এ দিনটি বিশ্বের সকল স্কাউটদের কাছে ‘ফাউন্ডার ডে’ হিসাবে পরিচিত। স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট স্টিফেনসন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অফ গিলওয়েল কর্তৃক নির্ধারিত উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও পদ্ধতিতে পরিচালিত শিশু, কিশোর ও যুবকদের জন্য স্কাউটিং একটি স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও শিক্ষামূলক আন্দোলন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্যই স্কাউটিং।
স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল সকলের নিকট ‘বিপি’ নামেই অধিক পরিচিত। তিনি ১৮৫৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের প্যাডিংটনে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪১ সালের ৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তার ভাইয়েরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তাকেও অক্সফোর্ডে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়; কিন্তু তিনি ১৮৭৬ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ জনের মধ্যে ২য় স্থান অর্জন করে ১৩তম হুসার্স সেনাদলে কমিশন পদে সরাসরি ‘সাব লেফটেনেন্ট’ হিসাবে যোগদান করেন। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর ভারতে পোস্টিং লাভ করেন। ব্যাডেন পাওয়েল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও দক্ষতার স্বীকৃতি হিসাবে ১৮৮৩ সালে ২৬ বছর বয়সে ক্যাপ্টেন, ১৮৯৭ সালে কর্নেল পদে এবং বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে ১৯০০ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী হনার সর্বকনিষ্ঠ মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। সৈনিক জীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার দক্ষিণ আফ্রিকায় বুয়র উপজাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং সফলতা লাভ করেন। ১৯০৩ সালে আফ্রিকা থেকে ফিরে এসে দেখেন তার মিলিটারি ট্রেনিং ম্যানুয়েল হিসাবে লেখা ‘Aids to Scouting’ বইটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এবং শিক্ষক ও যুবকদের মধ্যে প্রচুর আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। তিনি সাধারণ যুব শ্রেণির উপযোগী করে বইটি পুনঃলিখনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯০৭ সালে তিনি চাকরিজীবন শেষ করেন।
এরপরও ১৯১০ সাল পর্যন্ত তাকে টেরিটোরিয়েল ডিভিশনের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে হয়, যার সদর দফতর ছিল রিচমন্ড ক্রাসেল। এ সময় থেকেই রাজা ৭ম অ্যাডওয়ার্ডের পরামর্শে তিনি স্কাউটের গোড়াপত্তনে বিশেষ মনোযোগী হন। এর মধ্য দিয়ে তার প্রথম জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় জীবনের গোড়াপত্তনের কাজে মনোযোগী হন তিনি। ১৯০৭ সালে ইংল্যান্ডের পোল হারবারে অবস্থিত ব্রাউনসি দ্বীপে ২১ জন ছেলেকে নিয়ে পরীক্ষামূলক স্কাউট ক্যাম্প করেন। তিনি ১৯০৮ সালে ছয় কিস্তিতে ‘স্কাউটিং ফর বয়েজ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। বইটি ৩৫টি ভাষায় প্রকাশিত হয়। বালকরা এ বই পড়েই স্কাউটিং শুরু করে। ১৯০৯ সালে লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেসে স্কাউটদের নিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পে ১১ হাজারজনের মধ্যে শুধু একটি মেয়ে দল অংশগ্রহণ করে। মেয়েদের অনুরোধের কারণে এবং তাদের স্কাউটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ব্যাডেন পাওয়েলের আগ্রহে ১৯১০ সালে তার বোন অ্যাগনেসের দায়িত্বে মেয়েদের জন্য গার্ল গাইড প্রবর্তন করা হয়। ফলে সারা বিশ্বে স্কাউটিং ও গার্ল গাইড আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা-উত্তরকালে ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল “বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি” গঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ সমিতি ১১১নং অর্ডিনেন্স বলে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ১ জুন “বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি” বিশ্ব স্কাউট সংস্থার ১০৫তম সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ স্কাউট সমিতির নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস’ রাখা হয়।