পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন পর ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এ আসনে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭১০ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২২৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৩ জন।
আসনটির অতীত রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৬ সালে নির্বাচিত হন কমিউনিস্ট নেতা কমরেড ফরহাদ। পরবর্তীতে ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জয়ী হন বিএনপি নেতা মোজাহার হোসেন। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম সুজন।
এবারের নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে একক মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ঘোষিত প্রার্থী সফিউল্লাহ সুফিও সরব রয়েছেন মাঠে।
এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জনগণের দৃষ্টি কেড়েছেন সমাজসেবক ও লেখক, দলটির জেলা সংগঠক শিশির আসাদ।
এ ছাড়া জাসদ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য এমরান আল আমিনও এ আসনে সক্রিয় রয়েছেন।
প্রার্থীরা তাদের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন,
“পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে যারা মাঠে থেকে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছেন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন—তাদের মধ্য থেকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই তার পক্ষেই কাজ করব।”
শিশির আসাদ বলেন,
“আমরা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের একটি পার্ট। জনগণ আমাদের নতুন শক্তি হিসেবে দেখছে। আমরা সুসংগঠিতভাবে মাঠে নেমেছি। আশা করছি, জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।”
সফিউল্লাহ সুফি বলেন,
“এই এলাকা জামায়াত ঘাঁটি এলাকা। আমরা জনগণের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি এবং জনগণ আমাদের সাড়া দিচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আমরা জয়ী হব।”
এদিকে ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচন ঘিরে নানা আলোচনা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভোটার বলেন,
“তিনজন প্রার্থীই শক্ত অবস্থানে আছেন। আমরা তো বিএনপি, জাপা, আওয়ামী লীগ সবাইকেই দেখেছি। এবার মানুষ পরিবর্তন চায়। তরুণ প্রার্থী শিশির আসাদ যেভাবে মাঠে নেমেছেন, আমরা তাকে সমর্থন করব।”
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ আসনে একটি ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তবে তরুণদের একটি বড় অংশ বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে নতুন দলগুলোর দিকেই ঝুঁকছে।