ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ৫০ টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করা হয় গত ২০২১ সালের ১০ জুন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ সকল মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় কাজ অসম্পন্ন থাকায় উদ্বোধনের ১ বছর প্রায় ৫ মাস এ মসজিদটি ব্যবহার করা হয়নি। পরবর্তীতে ২২ সালের ১৮ নভেম্বর হতে/১ বছর দুইমাস পর নামাজ ও অন্যান্য কার্যক্রম চালু করা হয়।
উদ্বোধনের ২ বছর ৮ মাস ও ব্যবহারের ১ বছর ৩ মাসের মধ্যে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের মডেল মসজিদের গম্বুজে ফাটল ধরেছে। বিভিন্ন ত্রটি দেখা দিয়েছে মসজিদটির নানা অংশে। এসব ত্রটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) দেখিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
এরমধ্যে একটিতে বড়োসড়ো ফাটল ধরেছে। এছাড়াও দেয়ালে লাগানো বিদ্যুতের সুইচ বোর্ড ও টয়লেটের ফ্লাশ দিয়ে বৃষ্টির পানি চুয়ে পড়ে, একাধিক কমোটের ফ্লাশে পানি থাকেনা, ছাদের ওপরে লাগানো পিভিসি পাইপের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি চুয়ে পড়ে স্টোর রুমে পানি জমে। টয়লেটের ওপরে ফ্লাশ, দরজায় নিম্নমানের কবজা ব্যবহার করায় কোনোটি ইতোমধ্যেই অকেজো হয়েছে, কোনোটি ভেঙ্গে গেছে। নিম্নমানের উপকরণের ব্যবহার ও কাজের মধ্যে গাফিলতির অভিযোগ নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার বিল্ডার্সের বিরুদ্ধে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার পাটগ্রাম পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মির্জারকোট এলাকায় এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ করেন ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার বিল্ডার্স। ৪৮ শতাংশ জমির মধ্যে তিনতলা বিশিষ্ট এ মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় একহাজার মানুষ নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা।
নারী-পুরুষ পৃথক অজু ও নামাজের স্থান, হজ্জ যাত্রীদের নিবন্ধন, গবেষণাগার, পাঠাগার, হিফজ মাদ্রাসা, মক্তব, পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থা, ইমামদের প্রশিক্ষণ ও গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, দাওয়াতি কার্যক্রম, মৃত ব্যক্তির গোসলের ব্যবস্থা, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিনের আবাসন প্রকল্পসহ বহুমুখী ইসলামিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে এ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে নির্মাণ এবং বাস্তবায়ন করে সরকার।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, মসজিদটি নির্মাণের সময় দরজায় নিম্নমানের কাঠ দেওয়াসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ করা হয়। ওই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি দরজার কিছু কাঠ পরিবর্তন করলেও মসজিদের বিভিন্ন অংশের নির্মাণ কাজে নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করে। এ নিয়ে মসজিদের মুসল্লিসহ, ইমাম, মুয়াজ্জিনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।
গত সোমবার দুপুরে মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে, দ্বিতীয় তলায় মুসল্লিদের নামাজের স্থানে পাশে জানালায় কোনো রেলিং দেয়া হয়নি। এতে জানালার ওই ফাঁকা স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। মসজিদের বারান্দার চারদিকের দেয়ালে সৌন্দর্য্য বর্ধক ডিম লাইট স্থাপনের অনন্ত দশটি স্থানে লাইট লাগানো হয়নি। ওই স্থান গুলোর বৈদ্যুতিক সংযোগের তার বের করে রাখা হয়েছে।
এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নিচে প্রথম ফ্লোরে ইসলামিক পাঠাগারের থাই গ্যাসের দরজা খোলেনা। মসজিদে লাগানো বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরা অচল। বর্জ্যপাত নিরোধক দন্ড ভেঙ্গে ছাদের ওপরে পড়ে আছে। মসজিদের সামনের ডানদিকের বাউন্ডারী দেয়ালের নিচের মাটি ধ্বসে গেছে। মসজিদের সাউন্ড সিস্টেম ভালো না। নির্মাণের কিছুদিন যেতে না যেতেই মসজিদটির এ দশা হওয়ায় স্থানীয় মানুষ চরম ক্ষোভ জানায়।
মির্জারকোর্ট এলাকার বাসিন্দা একাব্বর আলী বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে মসজিদে নানান ত্রটি দেখা দেওয়ায় আমাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। গম্ভুজে ফাটল ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে ডেকে দেখিয়েছি।’ ইঞ্জিনিয়ার বিল্ডার্সের এ মসজিদ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধি বাবু বলেন, ‘আমি দেশের বাড়িতে এসেছি। সমস্যা গুলো সমাধান করার কাজ চলমান। আমি গিয়ে আপনাকে বিস্তারিত জানাবো।’
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নিজেই গিয়ে দেখেছি। মসজিদ এখনও আমরা বুঝে নিইনি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীকে ডেকে মসজিদের সমস্যা ঠিক করে দিতে বলেছি। সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে।’
লালমনিরহাট গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী (সিভিল) প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, ‘গম্বুজের ফাটলটি প্লাস্টারের ফাটল। পানি পড়ার সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। এখনও ঠিকাদারের কাছ হতে কাজ করে নেওয়া হচ্ছে।’