পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার বামন চিংড়ি।
নভেম্বর থেকে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত চলে এ বামন চিংড়ির বেচা-কেনা। এটি একটি মৌসুমী ব্যবসা। এ বামন চিংড়ি মাছকে স্থানীয়দের কাছে ভুলা চিংড়ি নামে পরিচিত। মূলতঃ শীত মৌসুম এ চিংড়ির প্রধান মৌসুম। বামন এ চিংড়ি গুলো আকারে এক ইঞ্চি থেকে সোয়া ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের আয়ুস্কাল ৯০ দিন পর্যন্ত হয়। মূলত লবণাক্ত পানিতে এ ভুলা চিংড়ির জন্ম হয়। বর্তমানে সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমানে ভুলা চিংড়ি। ভুলা ব্যবসায়ীরা সাগরে জেলেদের কাছ থেকে কাঁচা বামন চিংড়ি ক্রয় করে রোদে শুকিয়ে বিক্রি করছেন ভুলা চিংড়ি নামে। অপরদিকে,এ চিংড়ির জালে শিকার হওয়া অন্যান্য প্রজাতির শত শত মন ছোট মাছ শুকিয়ে মুরগীর খাবার হিসেবে বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।
প্রতি বছর শীত মৌসুমে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হাজীপুর নদীর পাড় থেকে তেগাছিয়া খেয়াঘাট পর্যন্ত অপরদিকে, মহিপুর ইউনিয়নের পুরান মহিপুর নদীর পাড় থেকে মহিপুরের গোড়াখাল পর্যন্ত অন্তত ১৪/১৫ কিলোমিটার জুড়ে পাঁচ সহস্রাধিক নারী,পুরুষ,শিশু শ্রমিকরা কাজ করছেন ভুলা প্রসেসিং করতে। এরমধ্যে কেউ ট্রলার থেকে তুলছেন মাছ, কেউ রোদে শুকাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ গুছিয়ে করছেন বস্তাবন্দি। এ ব্যবসা এক সময় তেমন জমজমাট না থাকলেও গত ৫/৬ বছর ধরে এ ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েছে শতশত মানুষ। বর্তমানে পাইকারী বাজারে প্রতিমন ভুলা চিংড়ি মান ভেদে ৪ হাজার, ৬ হাজার এবং ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।
এ ব্যবসার জড়িতদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তিন মাস কিংবা কেউ কেউ অন্য প্রজাতির মাছ রোদে শুকাতে ছয় মাসের জন্য নদীর পাড়ে দু’হাজার টাকা কড়া হিসেবে জমি ভাড়া নিয়ে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদের একজন মালিক এবং তাঁর অধীনে ৬ থেকে ১০ জন শ্রমিকরা কাজ করছেন। এদের প্রত্যেকে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা করে মজুরী পাচ্ছেন। স্থানীয় শ্রমিক ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতশত শ্রমিকরা ভুলা চিংড়ির মৌসুমে আসেন কাজ করতে। এদের অধিকাংশরা নদীর পাড়ে অস্থায়ী টোঙ ঘর করে বসবাস করছেন।
ফয়সাল নামে এক শ্রমিক বলেন’ বছরের অন্যান্য সময় অন্য কাজ করছি,শীত মৌসুমে ভুলা চিংড়ি শুকানো কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে মালিক সাপ্তাহিক বিল এক সঙ্গে পরিশোধ করছেন।
আায়শা নামে এক শ্রমিক বলেন’ বাড়ীতে বসে থাকার চেয়ে প্রতিদিন এ কাজ করে ৭০০/৮০০ টাকা করে পাওয়া যাচ্ছে। এটা পরিবারের জন্য অতিরিক্ত উপার্জন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মো.শফি মিরাজ নামে এক ভুলা ব্যবসায়ী বলেন’ তার অধিনে ১০ জন মানুষ কাজ করছেন। তার মত এখানে অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন, এতে প্রতিদিন কোটি টাকার ভুলা চিংড়ি বেচা-কেনা হচ্ছে। যা ট্রাক যোগে যাচ্ছে চট্রগ্রাম কক্সবাজার সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.কামরুল ইসলাম জানান, ছোট এ চিংড়িকে স্থানীয়রা ভুলা চিংড়ি বলে বিক্রি করেন। এর আয়ুস্কাল ৯০ দিন। এক সময় এ ব্যবসায় মানুষের তেমন কোন গুরুত্ব না থাকলে বর্তমানে এটি লাভ জনক ব্যবসা বলে এখন শতশত মানুষ জড়িয়ে পড়ছেন এ ব্যবসায়।