রাজধানীর বনানী থানার পুলিশের এস আই ও সোর্সরা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড বিশেষ করে জুয়া খেলা এবং মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। অসাধু পুলিশদের পরোক্ষ সহযোগীতায় চলছে মাদক বেচা-কেনা। ইয়াবা, হেরোইন,ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসা। প্রায় সময়ই দেখা যায় সোর্সরা আসামি ধরার নামে বনানী থানার পুলিশদের সাথে গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। সাধারণত চাহিদামত দাবি পূরণ না হলে, যে কাউকে ফাঁসাতে পারে। তাই সোর্সদের নিয়ে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনানী থানা এলাকার সাততলা বস্তি, কড়াইল বস্তি, বেদে বস্তি, এরশাদ নগর বস্তি ও গোডাউন বস্তির সোর্সরা সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িত। পুলিশের গাড়িতে চলাফেরার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ভয়ে মুখ খোলে না। গোডাউন বস্তিতে সোর্স শহীদ, হারুন, ড্রাইভার কাশেম, কড়াইল স্যাটেলাইট এলাকায় খোকা ফর্মা, সাততলা বস্তিতে বডু জাকির, পিচ্চি কবির ও আনোয়ার তারা সরাসরি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়া তারা জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণ করে।
তারা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় একাধিকবার পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক হন। এরপর থেকেই পুলিশের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে হয়ে ওঠে আরো ঘনিষ্ঠ। আইনের ফাঁকে বেরিয়ে এসেই শুরু করে তাদের পুরোনো কর্মকাণ্ড, সঙ্গে যোগ করেন পুলিশের সোর্স হিসেবে বাড়তি ক্ষমতা।
বনানী থানা পুলিশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সোর্স গোডাউন বস্তির শহীদ। তার ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে চলে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও বিয়ারের ব্যবসা। এছাড়া প্রতিদিন তার ঘরে জুয়ার আসর বসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্তির একাধিক ভুক্তভোগী জানান, শহীদের মাদক কারবারে কেউ বাধা দিলে তাকে নিয়ে চলে ষড়যন্ত্র। কখনো ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি আবার কখনো মারধরের হুমকিও দেওয়া হয়। প্রায় সময়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বনানী থানা এলাকা গুলোতে অভিযান চালানোর আগেই সব মাদক কারবারিদের পূর্বেই সতর্ক করে দেন শহীদ। বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাম্প্রতিক চাঁদা পান শহীদ। ফলে অভিযান চালিয়েও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সফলতা পাচ্ছে না বনানী থানা পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, অপরাধী গ্রেপ্তারে নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করাই সোর্সের কাজ। পুলিশ এসব সোর্স নিয়োগ করে অপরাধীদের মধ্য থেকেই। বিনিময়ে তারা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু সোর্সেরা অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করছেন। তাদের সাথে জড়িত রয়েছেন থানার কিছু অসাধু কর্মকর্তারাও।
অভিযোগ এসেছে, গত ১১-০১-২৪ ইং কড়াইল বস্তি থেকে বিপুল পরিমাণ হিরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমানকে বনানী থানার এস আই মোহাম্মদ আশরাফুল হক সঙ্গীয় ফোর্সসহ গ্রেপ্তার করে। এসময় জিল্লুর রহমানের ঘর থেকে মাদক বিক্রির প্রায় ৫৫ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পুলিশ সে টাকা থানায় জমা দেয়নি এবং মামলায় উল্লেখ করেননি। এছাড়া বিপুল পরিমাণ হিরোইন উদ্ধার করা হলেও জিল্লুর রহমানকে অল্প পরিমাণ হিরোইন উদ্ধার করার কথা উল্লেখ করে মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেন। বাকি হিরোইন সোর্সদের বিক্রির জন্য দেওয়া হয়। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে জিল্লুরের পরিবারের লোকজনকে মুখ বন্ধ রাখতে হুমকি দেন এস আই আশরাফুল।
মাদক ব্যবসায়ী জিল্লুরের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন, পুলিশ ৫৫ লাখ টাকা নেয়নি তা প্রমাণ করতে গ্রেপ্তারের সময় কোনো ভিডিও না করলেও পরে এসে সাজানোভাবে ভিডিও বানিয়ে নিয়ে যায়। এবং মুখ বন্ধ না রাখলে সবাইকে মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়।
এদিকে তিন জুয়াড়িকে ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে বনানী থানার এসআই একেএম মাহমুদুল হাসান, এএসআই ফিরোজ আল মাসুদ ও সাবেক ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে।
৩ জুয়াড়ি আটক এবং ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) (অধস্তন কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা/২০০৬ মোতাবেক সাবেক ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়। গত ১৬ নভেম্বর এ সংক্রান্তে গুরুতর দুটি অভিযোগ তুলে ওসিকে চিঠি পাঠান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন পর্যালোচনার ভিত্তিতে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে ওসি বনানীর দপ্তরে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৪ আগস্ট কড়াইল বস্তি এলাকার মাদ্রাসা রোডস্থ রুচি বিরিয়ানির দোকানসংলগ্ন এরশাদের টিনের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালান বনানী থানার এসআই মাহমুদুল হাসান ও এএসআই ফিরোজ আল মাসুদ। সেখান থেকে তাস দিয়ে হাজারী খেলা অবস্থায় জনৈক শাহজাহান বাদশা, হাবিব ও আব্দুল হাই নামে তিন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান দুই পুলিশ সদস্য। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। পরবর্তী সময় রাস্তার চিৎকার-চেঁচামেচি ও হৈ-হুল্লোড় করার অভিযোগে ওসি মোস্তাফিজুর রহমান গ্রেপ্তার আব্দুল হাইকে ডিএমপি অধ্যাদেশে কোর্টে পাঠান। আসামি শাহজাহান বাদশা ও হাবিব হার্টের সমস্যা অনুভব করার কথা জানালে কোনো প্রকার ডাক্তারি সনদপত্রের সত্যতা যাচাই না করেই থানা থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় কোনো জিডি এন্ট্রি কিংবা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ওসি ওই দুই আসামিকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন এসআই একেএম মাহমুদুল হাসানকে।