জামালপুর সদর উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র দিগপাইতের সরিষাবাড়ি রোডে অবস্থিত নাছিমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সটি নবায়ন করা নেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক শহিদ ডাক্তার (সকলেই যে নামে তাকে চিনেন) পেশায় সে একজন ঔষধ ব্যবসায়ী। কয়েক বছর হলো, সে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা শুরু করেছে। তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির লাইসেন্সের মেয়াদকাল ২০২২ এবং ২০২৩ অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বৈধ ছিলো। লাইসেন্সের মেয়াদকাল ৮ মাস আগে শেষ হলেও কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লাইসেন্স নবায়ন করা ছাড়াই দেদারসে তিনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাকে প্রশ্ন করা হয়, লাইসেন্স নবায়ন না করে এভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন? জবাবে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেতে দেরী হয়েছে। গত বছর ৩০ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েছি। তারপর লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির যেমন অভাব রয়েছে। তেমনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ জনবলও নেই। খুব অল্পস্থানে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিচালিত হওয়ায় স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের কপি প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশ পথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে। সব বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকতে হবে। একইসাথে তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। যে সব প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে, কিন্তু শুধুমাত্র ডায়াগনস্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে, তারা লাইসেন্স পাওয়া ছাড়া কোনেভাবেই নামে উল্লেখিত সেবা প্রদান করতে পারবে না। ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রে যে ক্যাটারগরিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত, শুধুমাত্র সে ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনভাবেই অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না।
ক্যাটারগরি অনুযায়ী প্যাথলজি বা মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত সব চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রির সনদ, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু দিগপাইতের নাছিমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরকারের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে সর্বোপরি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশিত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তাদের মনগড়াভাবে পরিচালিত করছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারী জামালপুরের সিনিয়র ৪ জন সাংবাদিক বিস্তারিত তথ্য জানতে নাছিমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে, ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও তার ছেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কাতর্কি লেগে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে পত্রিকায় নিউজ ছাপা হয়। প্রশাসনসহ সামাজিকভাবে বিষয়টি সকলের সামনে চলে আসে। নাছিমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের ছেলে শুভ স্থানীয় এক সিনিয়র সাংবাদিককে জানান, উপর মহলে আলোচনা করা আছে। তাই নিউজ করে কিছুই করতে পারবেন না। সবকিছু ম্যানেজ করাই আছে। সারাদেশের অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় জামালপুর শহরের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে সিলগালাসহ বিভিন্ন অনিয়মের জন্য নগদ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু দিগপাইতের নাছিমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যাপারে কোন এক অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে। তাই জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এখানে অন্যকোন বিষয় আছে নাকি প্রশাসনের ক্ষমতার চেয়েও নাছিমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ক্ষমতা বেশী? ওই এলাকার সচেতন মহলে এ বিষয়টা নিয়ে নানানরকম আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন মহল প্রশাসনকে অতিদ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।