লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর দুর্গম চরে নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুতায়নের কাজ করছেন চেয়ারম্যান মুজিবুল আলম সাদাত।
বিচ্ছিন্ন এ চরাঞ্চলে পিলার,গাছের খুটি ও ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কাজ চলছে।
বিদ্যুতায়নের ফলে তিস্তা চর অধ্যুষিত পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ আধুনিক নাগরিক সুবিধার আওতায় আসবে। ইতোমধ্যে আলোর ইশারা পেয়ে খুশি চরের মানুষ। বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পন্ন হলে নদীবেষ্টিত এ চরাঞ্চলবাসীর জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন চরবাসীসহ ইউনিয়নবাসী।
সর্বনাশা তিস্তা নদীর ভাঙ্গাগড়ার খেলায় মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই ইউনিয়নের উত্তর হলদিবাড়ি ও পশ্চিম হলদিবাড়ি এতদিন বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।বৈদ্যুতিক লাইন প্রত্যন্ত চর এলাকায় যাওয়ায় সেখানকার মানুষজন জানায়, এখানে বসবাস করা মানুষগুলোর কাছে বিদ্যুৎ ছিল স্বপ্নের মতো।
আমরা কখনও ভাবিনি এ দুর্গম জনপদে বিদ্যুৎ আসবে। আমাদের স্বপ্ন এবার হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে বিদ্যুতের আলো। দুর্গম চরাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ডে আনন্দ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।তারা মনে করছেন এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অন্ধকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আলোর পথে নতুন যাত্রা শুরু করবেন তারা।
একইসঙ্গে জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে তাদের। অবহেলিত এ জনপদে যোগ হবে নতুন দিগন্তের সূচনা।এখনও তিস্তার চরের মানুষের সৌর বিদ্যুৎ, হারিকেন ও প্রদীপের আলো একমাত্র ভরসা। ডিজেল চালিত মেশিনে উৎপাদিত হচ্ছে কৃষিপণ্য।
স্থানীয় বাসিন্দা নুর ইসলাম বলছেন, তিস্তা নদীর এ চর উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকা। নৌযান ছাড়া চরে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই।আমরা চরবাসী কখনও বিদ্যুতের আলো পাব, তা কল্পনাও করিনি। এখন চরে বিদ্যুতের লাইন দৃশ্যমান। তার টানাসহ সব কাজ শেষ পর্যায়ে। এজন্য নতুন স্বপ্ন বুনছেন দুর্গম চরের বাসিন্দারা।
স্থানীয় একজন কৃষক আলিফ বলেন, এখানে বিদ্যুৎ আসবে, তা আমাদের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ফলে আমরা এলাকার কৃষকরা অনেক উপকৃত হবো।বিশেষ করে ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের সাহায্যে জমির সেচ কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেক টাকা খরচ হতো। এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ায় আমাদের জমি চাষাবাদ করতে টাকা খরচ কম হবে।
রাস্তা সংস্কারের ফলে এ এলাকায় কৃষি কাজের উপকরণ ভুট্টা, আলুসহ সকল পন্য কম খরচে ভুখন্ডের মুল বাজারে নিয়ে যেতে পারবো। ফলে ব্যাপক মুনাফা অর্জনে সক্ষম হবে চরবাসী।
পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল আলম সাদাত বলেন , আগামী বছরের শুরুতে আমার ইউনিয়নের দুর্গম চরে জ্বলবে বিদ্যুতের আলো।
সে লক্ষ্যেই দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে চরাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে এখানে আগে যে পরিমাণ ফসল উৎপাদন হতো, বিদ্যুতের কারণে এখন বেশি পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন হবে।
ডিজেল নির্ভর এই অঞ্চলের কৃষকরা এখন বিদ্যুতের সাহায্যে জমিতে সেচ দিয়ে একাধিক ফসল ফলাতে পারবেন।
নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী দেব কুমার সরকার বলেন, সরকার চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলেও বিদ্যুৎ না থাকায় সেখানকার মানুষ অনগ্রসর রয়েছে।একই সঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ আয়ের বহুমুখী ধারার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারছে না।
চর এলাকায় চারদিক থেকে পানিবেষ্টিত হওয়ায় এখানে সরাসরি গ্রিড পৌঁছানো কঠিন তাই সরকারি প্রজেক্টের মাধ্যমে পাটিকাপাড়া এলাকার চর অঞ্চলে মুজিবুল আলম সাদাত চেয়ারম্যান এর উদ্যোগ ও সহযোগিতায় কাচা পাকা খুটি দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় নেসকোর প্রজেক্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহে নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলবাসীর জীবনধারা পরিবর্তন হবে বলে মনে করি।
এর মাধ্যমে শহরের সকল সুবিধাগুলো সমানভাবে চরাঞ্চলবাসিরাও ভোগ করতে পারবেন।