আমরা এমন এক দেশে বসবাস করি যেখানে নিত্য পণ্য বা অন্য যেকোনো পণ্যের দাম যদি একবার বৃদ্ধি পায় তা আর কমার নাম নেই আর দাম বাড়ার কথা বাতাসে শুনলেও তা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
২০০৯ সালে ১ কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। দশ বছর পর ২০১৯ সালে দাম ৪৭০ থেকে ৫০০ টাকা আর ১৫ বছরের ব্যবধানে ২০২৪ সালে তিনগুণ দাম বেড়ে গরুর মাংসের দাম হয় ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। এখন থেকে ঠিক পনের বছর আগে নিত্য পণ্যের দাম শুনলে রূপকথার গল্পের মত মনে হয়। কারণ গত ১০ থেকে ১২ বছরের নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। ২০০৯ সালে ১ কেজি আলুর দাম ছিল ১২ থেকে ১৫ টাকা ২০০৭ সালে একটি জনপ্রিয় স্লোগান ছিল বেশি করে আলু খান ভাতের উপর চাপ কমান। ২০২৪ সালে সেই আলু এখন বিলাসী পণ্যের মতো বর্তমানে আলুর দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মাঝে মাঝে ৮০ টাকাও কিনতে হয়। ২০০৯ সালে পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। ২০২৪ সালের সেটা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা তবে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে দাম হয় আকাশ ছোঁয়া। ২০১৯ সালে পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরির খবর হইচই ফেলে দিয়েছিল সারা দেশে। পেঁয়াজের মতো রসুন এর দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। ২০০৯ সালে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার রসুন এখন ২২০ থেকে ২৬০ টাকা। ২০০৯ সালে ঢাকায় এক কেজি সরু চালের দাম ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা ২০২৪ সালে ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। অন্যদিকে খোলা আটা বিক্রি হত ২৭ থেকে ২৯ টাকা যা এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এক দশক আগেও পাঁচ লিটার সয়াবিনের দাম ছিল ৩৫০ টাকা যা এখন ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। ২০০৯ সালে ১ কেজি চিনি ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা ২০২৪ সালে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। চিনির দাম বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। ২০০৯ সালে এক হালি ফার্মের লাল ডিম এর দাম ছিল ২৫ থেকে ২৬ টাকা ২০২৪ এসে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ফার্মের মুরগির দাম ছিল কম ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হওয়া ফার্মের মুরগি এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
১৫ বছরের মাছের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ ২০০৯ সালে ১ কেজি রুই মাছ বিক্রি হতো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা যা এখন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার বিক্রি হয়। নিত্য পণ্যের সাথে সাথে পানির দামও বেড়েছে তিনগুণ ঢাকা ওয়াসা গত ১৫ বছরে পানির দাম বাড়িয়েছে ১৪ বার ৫ টাকা ৫.৭৫ পয়সা থেকে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫.১৮ পয়সা।
বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১১ বার এছাড়া এলপিজি ও আবাসিক বাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বেড়েছে। এলপিজি গ্যাসের দাম ৭০০ থেকে বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে । জ্বালানি তেলের দাম হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সবকিছু বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে শীতকালীন সবজির দাম বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, লাউ, ঢেঁড়স, মুলা অন্যান্য শাকসবজির দাম ২০০৯ সালের সাথে তুলনা করলে বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ।
দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির বাজারে থেমে নেই মানুষের বাসা ভাড়া বাড়ানোর গতিও আর এই কারণে ঢাকা ছাড়ছে অনেক মানুষ। এর জন্য দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুসারে ২০০৯-১০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৮৪৩ মার্কিন ডলার। ২০২২ ২৩ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৬৫ মার্কিন ডলার কিন্তু সেই আয়ের সুষম বন্টন হচ্ছে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ যার ফলে একদল মানুষ দ্রুত ধনী হচ্ছে বিপরীতে গরিব হচ্ছেন আরেক দল মানুষ। তাই নিত্য পণ্যের দাম ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও বাড়েনি সাধারণ মানুষের আয়।
সাধারণ মানুষের এই দীর্ঘ শ্বাস দেখার যেন কেউ নেই।