পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আরিয়া গোয়ালবাড়ি গ্রামের রমজান বিশ্বাসের ছেলে বাবলু বিশ্বাস বাবু (৪০) এবং তার সকল শরিক বর্তমানে বাড়িছাড়া। তাদের অভিযোগ—স্থানীয় বিএনপির সাবেক সভাপতি ইউসুফ আলী শেখ ও তার অনুসারীরা নির্যাতন ও হুমকির মাধ্যমে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করেছেন।
রোববার (১৫ জুন) সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বাবু বিশ্বাসের বাড়ি তালাবদ্ধ। নিরাপত্তার অভাবে পরিবারের সদস্যরা আশপাশের গ্রাম ও দূরের আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সাহস করে ভুক্তভোগীরা সামনে আসেন, যদিও অভিযুক্তরাও একই সময়ে সেখানে উপস্থিত হন এবং পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন।
ঘটনার পেছনের কারণ জানতে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ৭-৮ বছর আগে বাবুর ভাই কুদ্দুস বিশ্বাস খুন হন। সেই মামলায় ইউসুফ আলীর পক্ষের কয়েকজন আসামি হলে, এর পর থেকে বাদীপক্ষের ওপর ক্ষোভ তৈরি হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর সেই মামলার বাদীপক্ষকে চাপ দিয়ে মামলা উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং ৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়।
সম্প্রতি পুনরায় ভয়ভীতি ও হামলা শুরু হয়। কখনও বাড়িতে বোমা নিক্ষেপ, কখনও পাওয়ারটিলার জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া—এরকম ঘটনায় বাবু বিশ্বাসদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখন তারা বলছে, ৩০ লক্ষ টাকা অথবা ৩৫ শতাংশ জমি লিখে না দিলে বাড়ি ফিরতে পারবে না। তারা সেই জমিটায় অবৈধ ভাবে উত্তোলিত বালু রেখে দখল করে রেখেছে।
মরহুম কুদ্দুস বিশ্বাসের স্ত্রী শাহীদা ইয়াসমিন বলেন, তার স্বামীকে হত্যা করে মামলা তোলার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করা হচ্ছে।
বাবু বিশ্বাস বলেন, মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করেও শান্তি মেলেনি। পাওয়ারটিলার কিনে আনার পর সেটি হাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয় এবং পরে বাড়ি থেকে জোর করে নিয়ে যায়। বর্তমানে হুমকি দেওয়া হচ্ছে—চাঁদা না দিলে এলাকায় ফিরতে দেওয়া হবে না।
বাবুর স্ত্রী মমতা খাতুন বলেন, অসুস্থ অবস্থায় রাত ১১টার দিকে ঘরের দরজায় বোমা মেরে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ—বৈসম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আসামীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ও ঐ সমস্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী দ্বারা চাষাবাদ বন্ধ করা, ক্ষেতের ফসল লুটে নেওয়া, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়িতে হামলা করাসহ তাদেরকে এলাকায় ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না।
অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, তারাও পালিয়েছে—তাদের কেউ বাড়ি ছাড়া করেনি।
আরিফুলের বাবা রশিদ শেখ স্বীকার করেন, ভুক্তভোগীদের পাওয়ারটিলারটি বর্তমানে তাদের বাড়িতে আছে।
প্রধান অভিযুক্ত ইউসুফ শেখ বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হয়েছে। সেই ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা বা জমি দাবি করেছি। বাড়িতে তালা দিয়েছি—এটা সত্যি।
এ বিষয়ে চরতারাপুর ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার এসআই আবু বকর সিদ্দিক বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।