২০২৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলোচিত মারপিটধর্মী চলচ্চিত্র ‘তাণ্ডব’, মুক্তির পরপরই দর্শকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফি এবং জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার আদনান আদিব খান যৌথভাবে চিত্রনাট্য রচনা করেন এই সিনেমার। দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে হামলার পটভূমিতে নির্মিত সিনেমাটিতে শাকিব খান, জয়া আহসান এবং সাবিলা নূর অভিনয় করেছেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। কিন্তু মুক্তির কিছুদিন পরই সিনেমাটি পাইরেসির কবলে পড়ে, যা বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা।
অনলাইনেই ভেসে যাচ্ছে কষ্টার্জিত পরিশ্রম সিনেমাটির নির্মাতা ও প্রযোজকরা অনেক শ্রম, মেধা এবং বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে “তাণ্ডব” নির্মাণ করেন। কিন্তু মুক্তির অল্প সময়ের মধ্যেই সিনেমাটি অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন টেলিগ্রাম, পাইরেটেড সাইট ও ফেসবুক পেইজে ছড়িয়ে পড়ে। পাইরেসির এই ঘটনায় দর্শকরা বিনামূল্যে সিনেমাটি দেখে ফেলছে, যার ফলে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং প্রযোজক-পরিবেশকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প ইতিমধ্যে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন নির্মাতারা যখন সাহস করে মানসম্মত কনটেন্ট তৈরির চেষ্টা করছেন, তখন বারবার পাইরেসির থাবা তাদের উৎসাহ নষ্ট করছে। একটি সিনেমা পাইরেসির শিকার হলে তার আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও ভরসা হারাচ্ছেন প্রযোজকেরা, ব্যাহত হচ্ছে পরবর্তী বিনিয়োগ।
‘তাণ্ডব’-এর পাইরেসির ঘটনা প্রমাণ করে, যতই ভালো সিনেমা বানানো হোক না কেন, যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়—তাহলে সেই শ্রম গিয়ে ঠেকে অবমূল্যায়নের মুখে।
চলচ্চিত্রটির পরিচালক রায়হান রাফি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন—
“আমরা অনেক কষ্ট করে এই সিনেমাটি বানিয়েছি। পাইরেসি আমাদের স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে। এই ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
তাঁর মতো অনেক পরিচালক, শিল্পী ও প্রযোজকই ন্যায্য সুরক্ষা ও কঠোর আইন প্রয়োগের দাবী জানিয়েছেন।
প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা যেমন আছে, তেমনি বিপদও ইন্টারনেট এখন সহজলভ্য, ফলে সিনেমা পাইরেসির ঘটনাও বেড়ে গেছে। কিছু অসাধু চক্র মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা রেকর্ড করে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়। আবার অনেক সময় অভ্যন্তরীণ কোনো লিক থেকেও সিনেমা বাইরে চলে যায়
‘তাণ্ডব’ কেবল একটি সিনেমা নয়, এটি বাংলা চলচ্চিত্রের একটি সাহসী প্রচেষ্টা। এমন একটি সিনেমা যদি পাইরেসির শিকার হয়, তাহলে নতুন নির্মাতাদের জন্য ভবিষ্যতটা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আমাদের নিজস্ব চলচ্চিত্রশিল্পকে হারিয়ে ফেলবো।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি রক্ষা এবং বিনোদনশিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই পাইরেসির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।