পিরোজপুর সদর উপজেলার রায়েরকাঠী শ্রীরামকাঠী সড়কটি এখন যোগাযোগের মাধ্যম নয়, পরিনত হয়েছে মৃত্যু ফাঁদে। রাস্তা ভেঙ্গে এমন খানাখন্দকে পরিনত হয়েছে যাতায়াতে সুস্থ মানুষও হয়ে পড়েন অসুস্থ। এই সড়কটি নির্মাণের ঠিকাদারি দেওয়া হয় ইফতি ইটিসিএল নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কাজটির দুটি প্যাকেজের চুক্তি মূল্য ১৭ কোটি ২৬ লাখ। কাজটি শুরু হওয়ার কথা ছিলো ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর এবং শেষ হবে ২০২৫ সালের ৫ নভেম্বর।অভিযোগ রয়েছে রাস্তার কাজ না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদার উঠিয়ে নিয়েছে টাকা।
স্থানীয়রা জানান, পিরোজপুর সদর থেকে রায়েরকাঠী হয়ে জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী এলাকা শ্রীরামকাঠী পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন যাবৎ মেরামত না করায় খানা খন্দক সৃষ্টি হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে এ রাস্তায় যেমন চলাচল করছে না বিভিন্ন ধরনের যানবাহন, তেমনি কমেছে মানুষের যাতায়াতও। ফলে বিকল্প রাস্তায় চলাচল করছে তারা। এতে যেমনি নষ্ট হচ্ছে সময়, তেমনি বাড়ছে যাতায়াত খরচ। এ চলাচল অনুপযোগী রাস্তায় যাতায়াত করে সুস্থ মানুষও হয়ে পড়ছে অসুস্থ, ভাঙ্গছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। এলাকাবাসীর অভিযোগ পিরোজপুর ০২ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজের ভাই, ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল কাজ না করে উঠিয়ে নিয়েছে টাকা। ফলে সড়কটি এখন পরিনত হয়েছে মৃত্যু ফাঁদে।
স্থানীয় শিক্ষক মামুন শেখ বলেন, ৫-৬ বছর ধরে রাস্তাটি এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। যার ফলে চারাচল করতে চরম ভোগন্তি হয় শুনেছি কাজ না করে ঠিকাদার টাকা উঠিয়ে নিয়েছে, যার কারণে কাজ হচ্ছে না। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব করেছে। যার কারণে এখন আমরা দুর্ভোগে আছি। আমাদের দাবি শিগগিরই কাজ শুরু করে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করা হোক।
রায়েরকাঠী এলাকার দীপালী সাহা বলেন, মানুষ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সও এ রাস্তায় ঢুকতে চায় না। রাস্তা মেরামত না হওয়ার আমার খুবই বেহাল দশায় আছে, কিন্তু দেখার কেউ নেই। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। এ পথ দিয়ে এখন আর যাতায়াত করার কোনো অবস্থা নেই।তেজদাশ কাঠী গ্রামের ভ্যানচালক শাহীন ইসলাম বলেন, বছরের পর বছর রাস্তা খারাপ থাকায় এ রাস্তায় মালামাল নিয়ে ভ্যান চালানো বেশ কষ্টকর। কয়েকদিন পরপর ভ্যান নষ্ট হচ্ছে। ঠিক করতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। যাত্রীরা ভ্যানে উঠতে চায় না। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত থাকায় প্রায়ই ঘটে ভ্যান উল্টে যাওয়া সহ নানা দূর্ঘটনা।
মূলগ্রাম বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, সড়কের কোথাও খানাখন্দ আবার কোথাও ঢিবির মতো উঁচু-নিচু। সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে ট্রাক পাওয়া যায় না। ট্রাকচালকরা এ রাস্তায় চালতে চায় না। ট্রাক আনতে হলে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়। অপরদিকে রাস্তার ধূলার কারণে দোকান খোলা যায় না। দোকানের মালামাল রাস্তার ধূলার কারণে নষ্ট হয় এবং ব্যবসায়ীদের শ্বাসকষ্ট হয়।এলজিইডির এ সড়কটি না করে টাকা উঠিয়ে নেয়ার যে অভিযোগ জানতে একাধিক বার নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে এর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খাঁন বলেন, এলজিইডির গ্রামীন অবকাঠামোগুলো বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াধীন ছিল। যেসব রাস্তাগুলো টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুমোদন হওয়ার পরে কাজগুলো সম্পন্ন হয়নি। দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে ঠিকাদার। কিভাবে আবার রাস্তাগুলি সংস্কার করা যায় তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইফতি ইটিসিএলের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।