পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক পুরাতন বেঞ্চ কেজি দরে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
বুধবার (০৪সেপ্টম্বর) উপজেলার ২৪নং ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিগার সুলতানা স্হানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাদের সহযোগিতায় চন্ডিপুরের ভাঙ্গারী ব্যাবসায়ী জাকির হোসেন গাজীর কাছে বিক্রির ব্যাপাবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ও তিনি স্বীকার করেছেন।
জানা যায়,বিগত ০৪/৮/২৫ইং তারিখে ২৪ নং ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১টি পরিত্যক্ত ভবন, ৮টি মেহগনি ও ৬টি চম্বল গাছের নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং ১১/৮/২৫ ইং তারিখ সোমবার নিলামের দিন ধার্য করে সে অনুযায়ী নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। অত্র স্কুলের পরিত্যক্ত ভবনের কক্ষে পুরাতন শতাধিক বেঞ্চ রাখা ছিল,এই সুযোগে বেঞ্চগুলো নিলামের সাথে চালিয়ে দেওয়া যাবে ভেবে পরিত্যক্ত কক্ষে শতাধিক পুরাতন ও অপ্রয়োজনীয় বেঞ্চ শিক্ষা অফিসারকে লিখিত বা মৌখিকভাবে না জানিয়ে বা নিলাম ছাড়াই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয় ৩জন বিএনপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের ও স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষকের সহযোগিতায় বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহেল সিকদার,শাহিন বয়াতি ও ইমাম শিকদার ঘোষেরহাট বাজারের সুপারি পট্টির চা ব্যবসায়ী এনায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এনায়েত চন্ডিপুর বাজারের চৌমুহনী সংলগ্ন ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী জাকির গাজীর নিকট বেঞ্চের লোহার পাইপ প্রতি কেজি ৩৯.৫০ টাকা দরে ৪৯০ কেজি সর্বমোট ১৯,৩৫৫ টাকায় বিক্রি করেন। সরেজমিনে গিয়ে জাকির গাজীর ভাঙ্গারী গুদামে উক্ত বেঞ্চ গুলো দেখতে পাওয়া যায় যা কোন কোন বেঞ্চে ফ্রেশ কাঠ রয়েছে।
ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন গাজীর গুদাম পরিদর্শন পূর্বক বেঞ্চ ক্রয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বেঞ্চ ক্রয়ের চুক্তিপত্র দেখান এবং বলেন ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন বেঞ্চ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহেল শিকদার, ইমাম শিকদার ও শাহীন বয়াতীর কাছ থেকে ৪৯০কেজি ৩৯.৫০ টাকা দরে মোট ১৯৩৫৫ টাকায় ক্রয় করেছি। স্কুলের বেঞ্চ তাদের কাছ থেকে কি করে কিনলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন চা ব্যবসায়ী এনায়েতের সহযোগিতায় কিনেছি, এই কাগজে উক্ত তিনজন নেতার নাম স্বাক্ষর ও মোবাইল নম্বর রয়েছে, আমি এতেই যথেষ্ট মনে করেছি।
ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিগার সুলতানার কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, স্কুলের পরিত্যক্ত ভবনে পুরাতন ও অপ্রয়োজনীয় বেঞ্চগুলো রাখা ছিল। যেগুলো আমার প্রয়োজন সেগুলো রেখে বাকিগুলো স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে বিক্রি করেছি। কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি বা নিলাম ছাড়া কি করে বিক্রি করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন বিএনপি নেতারা আমাকে বিক্রির অনুমতি দিয়েছে,কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন লাগবে আমি সেটা বুঝতে পারিনি। টাকা কি করেছেন জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাকিমের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন শুধু একটি পরিত্যক্ত ভবন ও কয়েকটি গাছের নিলাম হয়েছে বেঞ্চ বিক্রির নিলাম হয়নি। পুরাতন বেঞ্চ বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই বা অনুমতি নেয়নি। প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে আলাপ করে জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান বিন মোহাম্মদ আলীর কাছে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন পুরাতন বেঞ্চ বিক্রির নিলাম হয়নি। পুরাতন বেঞ্চ বিক্রির বিষয়ে তদন্তে ঘটনা সত্য প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।